‘ঢালাওভাবে প্রশাসনে রদবদলের প্রস্তাব গ্রহণ করবে না ইসি’
২০ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৩১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ঢালাওভাবে প্রশাসনিক দায়িত্বে রদবদলের কোনো প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন (ইসি) কখনও গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, রদবদলের প্রতিটি প্রস্তাব সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। তখন কমিশন তদন্ত করে দেখবে, কী কারণে তার বদলি চাওয়া হয়েছে। সেই কারণ খতিয়ে দেখে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীর অফিসে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সভা, ইসিতে অভিযোগ
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে এসব কথা বলেন ইসি সচিব। এসময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার যেন কোনো ধরনের বৈঠক না করে, সেজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হবে।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে অভিযোগ করে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রির্টার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা ওই চিঠিতে ইসি সচিবসহ ডিএমপি কমিশনারের বিচার দাবি করা হয়। চাওয়া হয় সচিবের বদলিও।
নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে সরকারের কাছে নির্বাচন কমিশন কোনো অনুরোধ করবে কি না— সাংবদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আজ কমিশন একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সবগুলো বিষয় মিলিয়ে সরকারকে আমরা একটি পত্র দেবো। সিদ্ধান্ত হয়েছে এরকম, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় যেন অভিযোগ না আসে, সে বিষয়টি যেন নিশ্চিত করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের অধীন হওয়ায় তাদের ডেকে যেন অন্য কেউ সভা না করে, সে জন্য উদ্যোগ নেবে ইসি। কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।
আরও পড়ুন- পর্যবেক্ষকরা কেন্দ্রে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন: ইসি সচিব
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে নির্বাচন কমিশন তা তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেবে। কর্মকর্তারা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কমিশন তা খতিয়ে দেখবে, তলিয়ে দেখবে, তদন্ত করবে। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রির্টানিং কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে সভা করা নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না— জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবহিত নই। যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে, আমরা খতিয়ে দেখব।
বিএনপির অভিযোগ, তাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়ে আসার পথে সাদা পোশাকের লোকজন তাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবহিত নই। কোনো অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
নিজের শাস্তি ও বদলির দাবির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের যে সিদ্ধান্তগুলো হয়, মুখপাত্র হিসেবে আমি সেগুলো ঘোষণা দিয়ে থাকি এবং সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে থাকি মাত্র। এখানে ইসি সচিবের আলাদা কোনো সত্তা নেই। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব সচিবের। এখানে সচিবের নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
পক্ষপাতমূলত আচরণকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান এবং জেলা প্রশাসনে অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপদেষ্টা (মেন্টর) মনোনয়নের তালিকায় তার নাম থাকা নিয়ে জানতে চাইলে সচিব বলে, মন্ত্রিপরিষদ গত ১৩ নভেম্বর মেন্টর নিয়োগের আদেশটি বাতিল করেছে। জেলাতে মেন্টর নিয়োগের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন জেলায় মেন্টর নিয়োগ করে থাকে।
তফসিল ঘোষণার দিন মেন্টর নিয়োগ করা হয়েছে, তবুও কেন কমিশনকে জানানো হয়নি— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি অবহিত নই।
বিএনপির অভিযোগ, সরকারের কারণে ইসি রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারছে না। কেন পারছে না বা চাপ আসছে কোথা থেকে— এ প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিটি সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনাররা নিজেরা বসে নিয়েছেন। কারও কোনো চাপ বা পরামর্শে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর