সিনেমায় অনুপ্রাণিত হয়ে ‘ডিবির টিম’, কাজ ছিনতাই!
২০ নভেম্বর ২০১৮ ২১:০২
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ভারতীয় সিনেমা ‘বস’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভুয়া একটি টিম গঠন করে তারা। তাদের পরনে থাকত ডিবির পোশাক, সঙ্গে থাকত ওয়াকিটকি, দামি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল ও মাইক্রো। আর তাদের কাছ ছিল মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, পুলিশের পক্ষেও শুরুতে বোঝা সম্ভব হয়নি যে তারা আদতে নকল পুলিশ।
সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতারের পর এভাবেই তাদের কার্যক্রম বর্ণনা করছিলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে ওই চক্রটিকে আটক করে পিবিআই। চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া যায় এসব তথ্য। মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান এসব তথ্য জানান গণমাধ্যমে।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ভারতীয় বাংলা সিনেমা ‘বস’ দেখে চক্রটির প্রধান এ কে এম রানা একটি ডিবি টিম গঠন করে। ওই টিমে ছিল একজন সহকারী কমিশনার (এসি), দুই জন পরিদর্শক, দুই জন উপপরিদর্শক (এসআই) ও ছয় জন কনস্টেবল। ১১ জনের এই চক্র ডিবির টিম সেজে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে তাদেরকে অপহরণ ও জিম্মি করে অর্থ আদায় করত। পরে একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে সোমবার চক্রটির আট সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া ভুয়া ডিবি চক্রের সদস্যরা হলেন— এসি এ কে এম রানা (৩৮); ইন্সপেক্টর মো. দোলোয়ার হোসেন (৫০) ও মো. সোহাগ খন্দকার (৩১); এসআই জাভেদ আহমেদ বাবু (৩৭) ও বুলবুল আহমেদ (৩২) এবং কনস্টেবল নাজমুল হোসেন (২৪), মো. আসাদুজ্জামান (৩৫) ও মো. হারুন ওরপে হিরু (৩২)। এসময় তাদের কাছ থেকে কয়েকটি ডিবির জ্যাকেট, তিনটি ওয়াকিটকি এবং চারটি দামি ব্র্যান্ডের মোটরবাইক ও কয়েকটি খেলনা পিস্তল জব্দ করা হয়।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, পোশাক-আশাকে কোনোভাবেই বোঝার উপায় ছিল না যে তারা ভুয়া ডিবি। কারণ তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সময় সম্পূর্ণভাবে ডিবিকে নকল করত। তাদের টার্গেট ছিল অর্থবান ব্যবসায়ীরা। আর এভাবে তারা ৩৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
যে ভুক্তভোগীর অভিযোগের সূত্র ধরে পিবিআই এই চক্রটি নিয়ে অনুসন্ধান চালায়, সেই ভুক্তভোগী সিঙ্গাপুর প্রবাসী মোস্তাফিজুর বলেন, গত ২৫ অক্টোবর পল্টনের বন্ধুর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে এয়ারপোর্ট অন্য এক বন্ধুকে দিতে যাচ্ছিলাম। সুপ্রভাত বাসে করে যাচ্ছিলাম। ওই বাস নর্দ্দা এলাকায় পৌঁছালে ডিবি পরিচয়ে
কয়েকজন লোক বাসে উঠে আমার কাছে ইয়াবা আছে— এমন অভিযোগ করে আমাকে বাস থেকে নামিয়ে তাদের মোটরসাইকেলে তুলে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শেষে বাড্ডার বিআইএসটি মাঠে নিয়ে যায়। তারা আমার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিতে চাইলে আমি বাধা দেই। এসময় তাদের একজন আমাকে ছুরিকাঘাত করে ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। আমি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন দৌড়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে। এসময় তাদের সবাই গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়। তবে যে আমাকে ছুরিকাঘাত করতে চেয়েছিল, তাকে আটক করা হয়।
বনজ কুমার বলেন, পরে আটক ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি সাত জনকে আটক করা হয়। চক্রের বাকি তিন সদস্যকেও আটকের চেষ্টা চলছে।
পিবিআই প্রধান আরও বলেন, সেদিন ওই বাসে দু’জন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। ভুয়া ডিবিরা বাসে উঠে তাদের জিজ্ঞাসা করে, দুপুর বেলা কোথায় যাও? জবাবে তারা দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছে বললে তারা বলে, ডিউটি ফাঁকি দিতে যাচ্ছ? ভালো করে ডিউটি করো। ওই দুই পুলিশ সদস্য ‘জ্বি স্যার’ বলে সেখান থেকে বিদায় নেন। তারাও কোনোভাবেই বুঝতে পারেননি যে এরা ভুয়া ডিবি সেজে ছিনতাই করতে নেমেছে রাস্তায়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় মামলা হলে তদন্তের ভার পায় পিবিআই। এরপর অনুসন্ধান করে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় দু’জন পালিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, রাজধানীর বাবুবাজার, ইসলামপুর, তাঁতীবাজার এলাকায় ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করত তারা। কারণ এসব এলাকায় ব্যবসায়ীরা নদগ টাকা নিয়ে কেনাকাটা করতে যান। এসব এলাকায় তাদের সোর্সগুলো এসব তথ্য তাদের দিত।
সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর