মাঠ জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়নের পক্ষে জাপার তৃণমূল
২০ নভেম্বর ২০১৮ ২১:৩৫
।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার আগে মাঠ পর্যায়ে জরিপের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, পার্টির সুদিনে অনেকেই মনোনয়ন পত্র কিনেছেন। অনেকেই কেন্দ্রেীয় নেতাদের ‘খুশি করে’ মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে চাইবেন। কিন্তু তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার আগে মাঠ পর্যায়ে তাদের অবস্থানের বিষয়টি জানা উচিত। তা না হলে যদি ফের যদি দুর্দিন আসে তবে এসব দুধের মাছিরা উড়ে যাবে।
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে একটি পার্টি সেন্টারে প্রাথমিকভাবে মনোনীতদের নাম ঘোষণা অনুষ্ঠানে আসা নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথাই বলেছেন তারা। ওই অনুষ্ঠানে দলীয় ফরম ক্রয় করা ২৮৬৫টি ফরমের মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ৭৮০ জনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বাছাই করা হয়। এরপর তাদের নাম ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রীয়ভাবে। এসময় পার্টির প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে যাদের নাম এসেছে তাদের অনেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তারা কোন বিবেচনায় এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন সেটি বোধগম্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণের একজন মধ্যম সারির নেতা বলেন, একক ভোটে ঢাকার কোনো আসনই জাতীয় পার্টির পাওয়ার কথা নয়। সেখানে দলীয়ভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা একটি রাজনৈতিক কৌশল। তবে আমরা বিশ্বাস করি জোটগতভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করেই নির্বাচন হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের ঢাকা-৪ আসনটি জোটের কাছে চাইবো। দলীয় ফোরামেও আমরা সেটি আলোচনা করেছি। এখন দেখার পালা বৃহত্তর জোটে কী সিদ্ধান্ত আসে।
সিলেট বিভাগের একজন নেতা বলেন, দলীয়ভাবে কোনো প্রকার ফিল্ডওয়ার্ক না করেই কেন্দ্র থেকে একটি তালিকা করা হয়েছে। সেখানে অনেকেই বাদ পড়েছেন। যাদের তৃণমূলে দলীয় ভিত্তি রয়েছে। তার মতে, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার হওয়া উচিত। সাক্ষাৎকারের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যে ধরনের পদ্ধতি নিয়েছে জাতীয় পার্টিও তেমনটি করতে পারতো। সেটি না করে মনগড়া তালিকা করেছেন নেতারা। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এছাড়া বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার সঙ্গে আলাপ করেও এ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া গেছে। তারা বলছেন, গত ৫ বছরে কেন্দ্রে অনেক গতি আসলেও তৃণমূলে খুব বেশি অগ্রসর হয়নি। কর্মী-সমর্থক তৈরি হয়নি আশানুরুপভাবে। তাই প্রার্থী নির্ধারণে তৃণমূল নেতাদের চাহিদার বিষয়টি আমলে নেওয়া উচিত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে গুলশান-১ নম্বরের ওই ইএমকে সেন্টারের সামনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটে। এসময় বিভিন্ন নেতাদের জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যানার পোস্টার নিয়ে মিছিল-শোডাউন দেন নেতাকর্মীরা। দুপুরের দিকে এমন একাধিক নেতাকে দেখা গেছে নির্বাচনী আমেজে অনুসারিদের নিয়ে মিছিল সহকারে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করতে।
এ দিকে ওই অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির নেতাদের পাশাপাশি সম্মিলিত জাতীয় জোটভুক্ত দলগুলোর নেতাদেরও দেখা গেছে। তবে জোট প্রধান এইচএম এরশাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা হয়েছে কি না বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কথা বলেননি তারা।
একটি ইসলামী দলের নেতা সাইয়েদ মুজাফ্ফ আহমদ মুজাদ্দেদী বলেন, আসন নিয়ে কথা হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি ফয়সালা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলীয় এবং জোটগত প্রার্থী চূড়ান্ত করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে একক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা মেনে নিতে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এসময় উপস্থিত নেতারা তার সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে কথা দেন।
জানা গেছে, ৭৮০ প্রার্থীর মধ্য থেকে দলীয় প্রধান ৩০০ আসনের জন্য এককপ্রার্থী নির্বাচন করবেন। এরপর সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থীতা চূড়ান্ত করা হবে। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে যদি আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জোটে যেতে হয় তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন এরশাদ। এ ক্ষেত্রে সব ক্ষমতা থাকছে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির হাতেই।
সারাবাংলা/এমএস/এমএইচ
আরও পড়ুন
জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার চলছে, যোগ দিয়েছেন এরশাদ