মৃত তিমির পেটে ১০০০ প্লাস্টিক বর্জ্য!
২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৪৪
।। বিচিত্রা ডেস্ক ।।
প্লাস্টিকের জুতা, প্লাস্টিকের কাপ, প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের ব্যাগসহ এক হাজারেরও বেশি প্লাস্টিক পণ্যের সমাহার। প্লাস্টিক পণ্যের কোনো দোকান কিংবা প্লাস্টিক পণ্যের মেলার কোনো স্টলে হয়তো দেখা মিলবে এসব পণ্যের। কিন্তু কোনো দোকান বা মেলার স্টল নয়, প্লাস্টিকের এতসব পণ্য পাওয়া গেছে একটি তিমি মাছের পেটে!
ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি প্রদেশের ওয়াকাতোবি ন্যাশনাল পার্ক সংলগ্ন উপকূলে ৯ দশমিক ৫ মিটার লম্বা একটি মৃত তিমি ভেসে আসে। আর সেই তিমির পেট থেকেই বের হয় সহস্রাধিক এই প্লাস্টিক বর্জ্য। মঙ্গলবার এই তিমির সন্ধান পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে ওয়াকাতোবি ন্যাশনাল পার্কের কর্মীরা তিমিটিকে উদ্ধার করতে যায়। পার্ক প্রধান হেরি সান্তোসো জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ডব্লিউডব্লিউএফ ও পার্কটির সংরক্ষণ একাডেমী তিমিটির পেটে সব মিলিয়ে এক হাজারেরও বেশি প্লাস্টিক সামগ্রী বের করেছে। এসব বর্জ্যের মধ্যে ছিল ১১৫টি প্লাস্টিকের কাপ, চারটি প্লাস্টিকের বোতল, দু’টি প্লাস্টিকের জুতা। একটি নাইলনের বস্তাও ছিল তিমিটির পেটে। আর এগুলোর ওজন ছিল প্রায় ছয় কেজি।
আরও পড়ুন: গ্রিনল্যান্ডে বরফের নিচে গ্রহাণুর আঘাতে সৃষ্ট গর্তের সন্ধান
এতসব প্লাস্টিক বর্জ্য খাওয়ার কারণেই তিমিটির মৃত্যু হয়েছে কি না— সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্দোনেশিয়া। তবে সংস্থাটির সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সমন্বয়ক দয়ি সুপরাতি বলেন, আমরা তিমিটির মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে পারিনি। তবে যা দেখেছি, তা আতঙ্কজনক।
সুপরাতি জানান, তিমিটির দেহ যেভাবে পচা গিয়েছে, সে অবস্থায় এর মৃত্যুর কারণ বের করা সম্ভব হয়নি।
মৃত তিমির পেটে প্লাস্টিক দ্রব্যের সন্ধান অবশ্য এই প্রথম নয়। এ বছরের জুনেই থাইল্যান্ডের একটি সৈকতে ভেসে আসে মরা তিমি। ওই তিমির পেট থেকে বের করা হয় ৮০টি ৮০টি প্লাস্টিক ব্যাগ। সংশ্লিষ্টরা তখন জানিয়েছিলেন, এসব প্লাস্টিক ব্যাগ খেয়েই তিমিটির মৃত্যু হয়েছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, এরকম প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে সামুদ্রিক প্রাণী মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। কিন্তু বিশ্বের দ্বিতীয়তম প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় এর হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
উল্লেখ্য, প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন ওশান ক্রুসেডার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্লাস্টিক খেয়ে মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ১ লাখ সামুদ্রিক প্রাণীর। একটি প্লাস্টিক ব্যাগ একাধিক প্রাণীর মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, প্লাস্টিক সহজে ক্ষয় হয় না।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্লাস্টিক বর্জ্যের দেশ
‘সায়েন্স’ সাময়িকী বলছে, চীনের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয় ২৬ কোটি জনসংখ্যার ইন্দোনেশিয়ায়। প্রতিবছর দেশটিতে উৎপাদন হয় ৩২ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য। আর এর মধ্যে ১২ লাখ ৯০ হাজার টন বর্জ্যের শেষ পরিণতি হয় সমুদ্র।
এদিকে দ্য বর্গেন প্রজেক্ট নামের একটি সতেচনামূলক ক্যাম্পেইন চলতি বছরের শুরুতে এক প্রতিবেদনে জানায়, ইন্দোনেশিয়ার চার নদী— ব্রান্তাস, সোলো, সেরায়ু ও প্রোগো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০টি নদীর তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে।
বর্গেন প্রজেক্টের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের পরিষ্কার পানির ৬ শতাংশই ইন্দোনেশিয়ায়। কিন্তু পানির পাইপ স্থাপনে সরকারি উদ্যোগের অভাবে দেশটির বেশিরভাগ মানুষই প্লাস্টিকের পানির বোতল বা ফুটানো পানি ব্যবহার করে থাকেন। বহু ইন্দোনেশীয় প্রতিনিয়ত প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাপ, বোতল ও পাত্র ব্যবহার করে থাকেন। আর সেগুলোর স্থান শেষ পর্যন্ত হয় খোলা প্রকৃতিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক দূষণ থামাতে দেশটিতে পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। দেশটির সমন্বয় বিষয়ক মন্ত্রী লুহুত বিনসার পান্ডজাইতান ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ড ওশান্স সামিটে বলেন, সরকার প্রতিবছর পানি থেকে প্লাস্টিকের পরিমাণ কমাতে ১০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সামুদ্রিক বর্জ্য ৭০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনাও সরকার করছে বলে জানান।
তবে এখনও দেশটিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ আরও বাড়বে।
সারাবাংলা/আরএ/টিআর