সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ
২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৪৪
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
আজ বুধবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস। যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তিন সশস্ত্র বাহিনী (সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী) সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করে। এই সম্মিলিত আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জয় ত্বরান্বিত হয়। এই দিনটিকে স্মরণ করতেই প্রতিবছর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হচ্ছে।
দেশের সব সেনানিবাস, নৌঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি নেতৃত্বের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, শৃঙ্খলা, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে বাহিনীর গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনী দিবসে শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য শাহাদত বরণকারী মুক্তিযোদ্ধাসহ সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এ কর্মপরিকল্পনা সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, দক্ষ ও গতিশীল করবে। যেকোনো বাহিনীর উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হলো নেতৃত্বের প্রতি গভীর আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, পেশাগত দক্ষতা ও সর্বোপরি শৃঙ্খলা।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। এছাড়া, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা ও বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে সশস্ত্র বাহিনী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং এ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। তিন বাহিনী প্রধানরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৮’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিতসংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা জানাবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ৯ জন সেনা, এক জন নৌ ও তিন জন বিমান বাহিনী সদস্যকে ২০১৭-২০১৮ সালের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। এতে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, সাবেক প্রধান উপদেষ্টা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও তাদের পদমর্যাদার ব্যক্তি, ডেপুটি স্পিকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মুখ্য সচিব, সংসদ সদস্যরা (ঢাকা এলাকার ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা) উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন।
এদিকে, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে তিন বাহিনী প্রধান নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেবেন। ঢাকা ছাড়াও বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর, খুলনা ও রাজেন্দ্রপুর (গাজীপুরসহ) সেনানিবাসেও সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।
দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে, দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজসমূহ আগামীকাল বিকাল ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর সশস্ত্র বাহিনীর পরিবেশনায় ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। পরবর্তী সময়ে এই অনুষ্ঠান বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও প্রচারিত হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ বেতার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে ‘বিশেষ দূর্বার’ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর