Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ইয়েমেনে অপুষ্টি ও অবহেলায় ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু’


২১ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০৬

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

ইয়েমেনে গত তিন বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, খাদ্য-স্বল্পতা ও তীব্র পুষ্টিহীনতায় প্রায় ৮৫ হাজার শিশু মারা গেছে বলে জানিয়েছে শিশু অধিকার বিষয়ক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। এসব শিশুর বয়স পাঁচ বছরেরও কম। খবর বিবিসির।

দাতব্য সংস্থাটি জানায়, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আনুমানিক ৮৪ হাজার ৭শ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণ ও চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। যদি ইয়েমেনের শিশুদের তীব্র পুষ্টিহীনতার বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তবে প্রতিবছর দেশটির ২০ থেকে ৩০ ভাগ শিশু মারা যাবে।

যুদ্ধের কারণে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও ইয়েমেনি মুদ্রার দরপতন ইয়েমেনের অধিকাংশ পরিবারকে খাদ্য-অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়া কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ হোদাইদা বন্দরে সংঘর্ষ এই পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এই বন্দরটির মধ্য দিয়ে ইয়েমেনে শতকরা ৯০ ভাগ খাদ্য আমদানি করা হতো। বর্তমানে বন্দরটি থেকে মাসে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি কম হচ্ছে।

সেভ দ্য চিলড্রেন-এর ইয়েমেনের ডিরেক্টর তামের কিরোলস জানান, কয়েকজন শিশু মারা যায় বোমা ও বুলেটের কারণে তবে এরচেয়ে বেশি শিশু মারা যাচ্ছে অনাহারে। চাইলেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অপুষ্টিতে শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায় এবং একসময় শিশুদের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: ইয়েমেন দ্বন্দ্ব: ‘আরও দশ লক্ষ শিশু দুর্ভিক্ষের শিকার হবে’

ইয়েমেন, গৃহযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, শিশুর মৃত্যু

আরও পড়ুন: ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত হুথি বিদ্রোহীরা

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, এসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতই দুর্বল যে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এরা কান্নার শক্তিটুকু পায় না। বাবা মায়ের সামনে শিশুরা মারা যাচ্ছে তাদের কিছু করারও থাকছে না।

দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত নুসায়ের নামে তের মাসের এক শিশুকে পর্যবেক্ষণ করছে সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি জানায়, আগস্ট মাসে তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর যুদ্ধের কারণে নুসায়েরে মায়ের ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। নিয়মিত চিকিৎসা না পাওয়ায় অক্টোবরে নুসায়েরের আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।

নুসায়েরের মা বলেন, আমি ঘুমাতে পারছি না। সবকিছু যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি আমার শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের কিছু হলে আমি বাঁচতে পারবো না।

ইয়েমেনে ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। তখন হুথি বিদ্রোহীরা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা দখল নেয় ও প্রেসিডেন্ট আব্দে মানসুর হাদিকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। পরে হাদির অনুগত সেনাবাহিনীর একাংশ হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দেয়। হুথিদের পেছনে ইরানের সমর্থন থাকায় সৌদি আরবের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ হাদি সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা সৌদি জোটকে সামরিক সহায়তা দিয়ে এগিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। জাতিসংঘের তথ্যমতে এ যুদ্ধে অন্তত ৬,৮০০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ১০,৭০০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া ২ কোটি ২০ লাখ লোক মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সেভ দ্য চিলড্রেনের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনে পাঁচ বছরের নিচে অন্তত ৪ লক্ষ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এরমধ্যে ৩৬ হাজার শিশু এই বছরেই মৃত্যুবরণ করতে পারে। ইয়েমেনে বর্তমানে ৫০ লক্ষ শিশু দুর্ভিক্ষের শিকার।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনএইচ

ইয়েমেন গৃহযুদ্ধ দুর্ভিক্ষ শিশুর মৃত্যু

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর