সিলেট বিভাগের মনোনয়নে আলোচনায় ১৩ নারী প্রার্থী
২২ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৩১
।। বিলকিস আক্তার সুমি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
সিলেট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আট হাজারেরও বেশি নেতা। এর মধ্যে সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও বেশকিছু আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন নারী নেতারা। সিলেট বিভাগও তার ব্যতিক্রম হয়। এই বিভাগে চার জেলার ১৯ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌড়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ছয় ও বিএনপির পাঁচ জন নারী। এর বাইরে এই বিভাগে দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একজন ও ক্ষমতাসীন মহাজোটের আরেক শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন নারী মনোনয়ন প্রত্যাশীও রয়েছেন আলোচনায়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচনায় থাকা এই ১৩ নারী রাজনীতিকের কেউ রাজনীতিতে এসেছেন পিতার রাজনৈতিক পরিচয়ের সূত্র ধরে, কেউ স্বামীর। তবে পারিবারিক এই পরিচয়ের বাইরে খুব অল্প দিনের মধ্যেই তাদের কেউ কেউ নিজেদের পরিচয়কেই মুখ্য করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সে কারণে এলাকাবাসী ও স্থানীয় রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, এই ১৩ জন নারী প্রার্থীর মধ্যে বেশ কয়েকজনকেই আগামী নির্বাচনে দল থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো আসনে হয়তো মুখোমুখি থাকবেন নারী প্রার্থীরাই।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা
সিলেট বিভাগের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নারী রাজনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সায়রা মহসিন। প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলীর স্ত্রী তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর) আসনের উপনির্বাচনে জিতে এসেছিলেন তিনি। স্বামীর তৈরি করে যাওয়া ভোটব্যাংকের সঙ্গে এখন তার নিজের ভোটব্যাংকও রয়েছে। এ কারণে সায়রার অনুসারীরা বলছেন, এই আসনে সায়রার পক্ষেই সম্ভব নৌকাকে জিতিয়ে আনা। তারা সায়রা মহসিনের মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী।
সায়রা মহসিনের মতোই রাজনীতিতে আবির্ভাব দিরাই-শাল্লার (সুনামগঞ্জ) চৌকষ রাজনীতিবিদ, প্রয়াত অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তের। সুরঞ্জিতের মৃত্যুর পর তার ওপরই আস্থা রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। স্বামীর আসনে সংসদ সদস্য হয়ে সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন জয়া। আগামী নির্বাচনেও তাই তার পক্ষেই নৌকার মনোনয়নের পাল্লা ঝুঁকে থাকতে পারে বলে মনে করছেন জয়া ও তার অনুসারীরা।
আরও পড়ুন: সিলেট বিভাগে মনোনয়নে ফ্যাক্টর জোট
আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমানড্যান্ট মানিক চৌধুরী। বাবার পরিচয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। দশম সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। এরপর গত ৫ বছরে ভোটের মাঠেও নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছেন কেয়া চৌধুরী। হবিগঞ্জ-২ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে দলের মনোনয়নের দৌড়ে তিনি পিছিয়ে নেই মোটেই।
হবিগঞ্জের এই আসনেই আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের আরও এক নারী নেত্রী। তিনি সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহফুজা বেগম সাঈদা। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিশু ও পরিবারকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মাহফুজা এর আগে দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও আশা করছেন এই আসনে নৌকা প্রতীকের।
সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকার টিকিট পেতে দীর্ঘদিন ধরেই মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন শামীমা শাহরিয়ার। তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা এলাকা নিয়ে গঠিত আসনটিতে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসা কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা। তার বিশ্বাস, মনোনয়ন পেলে নারী ও তরুণদের জাগরণ ঘটিয়ে নৌকার জয় উপহার দিতে পারবেন তিনি।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী)। স্বামী গোলাম রব্বানী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। সেই সুবাদেই রাজনীতিতে যুক্ত হন শাহানা। চলতি সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার সরাসরি জনগণের ভোটে তিনি নৌকা নিয়ে যেতে চান সংসদে।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা
সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী নারী নেত্রীর সংখ্যা পাঁচ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ছয়টি আসনের তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তিন জন।
এই তিন আসনের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি আলোচিত সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনটি। এই আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন এম ইলিয়াস আলী। তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা এই আসনে হাল ধরেন বিএনপির। লুনা মনে করছেন, নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে তাকে ভোট দেওয়ার মাধ্যমেই স্বামীর গুমের জবাব দেবে সিলেটের মানুষ। অবশ্য এই আসনেই তার বড় ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াসও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সিলেটের রাজনীতিতে পরিচিত আরেক মুখ অ্যাডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী। সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসন থেকে দলের মনোনয়ন চান তিনি। অবশ্য তার মনোনয়ন পাওয়াটা সহজ হবে না। কারণ দলের বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন এই আসনের দৌড়ে। দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী ছাড়াও চিত্রনায়ক হেলাল খানও দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এই আসনে। শরিক দলের জন্য এই আসনটি ছেড়ে দেওয়ার আলোচনাও চলছে। তবে মুন্নী মনে করছেন, তিনি নিজে এই আসনে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
এদিকে, সিলেট-১ আসনের জন্য শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. নুরুন্নাহার বেগম। তিনিও এই আসনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের সায়রা মহসিনের মৌলভীবাজার-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী খালেদা রব্বানী। সিলেট ও মৌলভীবাজারের রাজনীতির ময়দানে পরিচিত মুখ খালেদা সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। তার অনুসারীরা বলছেন, তৃণমূল পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সে কারণেই দল তাকে মনোনয়ন দিতে পারে ধানের শীষে।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসন থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে ফরম কিনেছেন শাম্মী আক্তার। তার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। তবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে নিজেই নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন তিনি। সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্যও ছিলেন। গত কয়েক বছরে আন্দোলন করতে গিয়ে বেশকিছু মামলাও হয়েছে তার নামে। দল মনোনয়ন দিলে শাম্মী নির্বাচন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে জানান তার অনুসারীরা।
জাতীয় পার্টি ও জাসদের দুই নারী মনোনয়ন প্রত্যাশী
জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শিউলি আক্তার দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন সিলেট-২ আসনে। তার অনুসারীরা বলছেন, বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জে তার নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকেই আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আশা করছেন, এবার তার ভাগ্যে শিঁকে ছিঁড়বে।
অন্যদিকে, কুলাউড়া উপজেলার মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেহার বেগম। অবশ্য কেবল দল নয়, মহাজোটের হয়েই তিনি প্রার্থিতা চান এই আসনে। এর আগে, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এবারে আশা করছেন, জোট নেতা শেখ হাসিনা তাকেই জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেবেন তার আসনে।
সারাবাংলা/টিআর