Monday 20 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশে #মি-টু আন্দোলন: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ


২২ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৩৪ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৫২

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা:যৌন হয়রানি শুধু  মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করেনি, নারীদের জীবনের স্বাভাবিক চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তাদের অনেকেই শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্র থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আর যৌন হয়রানির এসব ঘটনা ঘটার অনেক পরেও তা প্রকাশ করার পরেও তারা সামাজিক সমস্যা এবং হুমকির সম্মুখীন হন।

বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘#মি-টু মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে বাংলাদেশে #মি-টু আন্দোলন: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শিরোনামে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব বলেন।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক, নাট্যকার মাসুম রেজা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম।


আলোচনায় আরও উপস্থিতি ছিলেন- যৌন হয়রানির বিষয়ে মুখ খোলা তিন নারী মুশফিকা লাইজু, তাসনুভা আনান শিশির ও জাকিয়া সুলতানা মুক্তা।

আয়েশা খানম যৌন নিপীড়ন এবং এর প্রতিবাদের পটভূমি নিয়ে আলোচনায় বলেন, ‘পিতৃতন্ত্র একটা পলিটিকাল ফিলোসফি। আমাদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক ফিলোসফিতে চলে। ফলে আমাদের আইন ও আইনের প্রয়োগে পিতৃতান্ত্রিক প্রভাব থাকে। যেখানে নারীর অভিযোগ করার বিষয়টিও বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়।’

অ্যাডভোকেট সালমা আলী আলোকপাত করেন যৌন হয়রানি বন্ধের আইনের উপরে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট বিভাগের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দেয়া নির্দেশনামূলক রায়ের বিষয়ে। তিনি বলেন, ‘এই রায়টি এখনও আইন হয়নি, এখন পর্যন্ত রায়ের আলোকে কর্মক্ষেত্রগুলিতে কমিটি গঠন হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আরও উল্লেখ করেন, শিক্ষাক্ষেত্রে যখন কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তাদের বেতনসহ ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি বৃত্তি দিয়ে বিদেশেও উচ্চশিক্ষায় পাঠানো হয়। কর্মক্ষেত্রেও অভিযোগকারী নারী হয়রানির স্বীকার হয়।

এছাড়াও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকেও একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য করেন তিনি। সালমা আলী বলেন, ‘যৌন হয়রানি বন্ধে কোনো পরিকল্পনা নেই, বাজেট নেই, কমিটি নেই। ফলে এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিচারের বিষয়টি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।’


ফাহমিদুল হক বলেন, ‘যেহেতু নারীর যৌন হয়রানি শুধু তার ব্যক্তিগত গ্লানির জায়গায় থাকছে না। এটা তার উন্নতিও ব্যাহত করছে। আইন তৈরি করতে হবে, সামাজিক সাংস্কৃতিক চাপও দিতে হবে।’ ইউএস কংগ্রেসে মিটু বিল উত্থাপনের সূত্র টেনে তিনি বলেন, ‘চাইলে আমরাও এটা করতে পারি।’

যারা আন্দোলন ছিদ্র অন্বেষণের চেষ্টা করছেন তাদের তিরস্কার করে তিনি বলেন, ‘যারা এটা করছে তাদের ভেতরে যে প্রভাব বিস্তারকারী মানসিকতা আছে তা থেকে এটা হচ্ছে। ভবিষ্যতের পুরুষদের ফিরে দেখানোর সুযোগ দিবে, এটাও একটা অর্জন।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ওহিদুর রহমান টিপু বলেন, ‘যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো নারীদের প্রমাণ রাখতে হবে। না হলে পরিবর্তিতে তা প্রমাণ করা সমস্যা হয়। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই যৌন হয়রানির রোধ করা সম্ভব।’

শীপা হাফিজা মি-টু আন্দোলনের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের মুখ খোলা বিশাল বিষয়। আপনাদের ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না।’

মি-টু আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ডেইলি স্টারের অবস্থান এবং সাংবাদিক এনাম আহমেদের দায় স্বীকার করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে সাধুবাদ জানান বক্তারা। তারা জানান, ‘মি টু’র ফলে নারীর সতীত্ব ধারণাকে ভেঙে মুখ খুলতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই আন্দোলন ভবিষ্যত পুরুষদেরও এই বিষয়ে সচেতন করেছে যে নারী কোনো ভোগ্য পণ্য নয়। তাকে সম্মান করতে হবে। তার পছন্দ-অপছন্দকে মতামত দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সেই ২০০৬ সাল থেকে ‘মি টু’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়ে আসছে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশে। ২০১৭ সালে আমেরিকান অভিনেত্রী অ্যালিসা মিলানোর টুইটারে #মি টু ব্যবহারের পরে সে জোয়ার লাগে সারা পৃথিবীতে। অ্যালিসা মিলানোর পথ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে একে প্রকাশ পেতে থাকে যৌন হয়রানির ঘটনা, যা থেকে বোঝা যায় পৃথিবী জুড়ে বিশেষ করে তথাকথিত উচ্চ শ্রেণির সমাজে যৌন হয়রানির তীব্রতা কতো বেশি।

বাংলাদেশে মি-টু আন্দোলন শুরু হয় বাংলাদেশী বংশদ্ভূত সাবেক মিস আয়ারল্যান্ড মাকসুদা প্রিয়তির হাত ধরে। ২৯ অক্টোবর প্রথম একটি পোস্ট দিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের রঙধনু শিল্প গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন।

এরপর একে একে আসতে থাকে থিয়েটার শিল্পী তাসনুভা আনান শিশির, শুচিস্মিতা সিমন্তি, আবৃত্তি শিল্পী, জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, উন্নয়ন কর্মী মুশফিকা লাইজু, সাংবাদিক আলফা আরজুর পক্ষ থেকে বাড়িতে, কাজের জায়গায় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানির কথা উঠে আসতে থাকে। যৌন হয়রানির এইসব ঘটনা প্রেক্ষিতে নারী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা একত্রিত হয়ে ‘#মি-টু মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ আন্দোলনে নামে।

সারাবাংলা/এমএ/এমও

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর