আ.লীগের কাছে ২৩ আসন চান বি. চৌধুরী, ৭টির আশ্বাস
২৩ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৪
।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে ২৩টি আসন চেয়েছেন যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)। তবে ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে সাতটি আসনের ব্যাপারে তাকে প্রাথমিকভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই সাতটি আসনের মধ্যে ছয়টিতে বিকল্পধারা বাংলাদেশের ‘হেভিওয়েট’ ছয় প্রার্থী লড়বেন। বাকি আসনটিতে লড়বেন যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি।
যুক্তফ্রন্টের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩টি আসন না ছাড়লেও যুক্তফ্রন্ট চেষ্টা করবে অন্তত ১০ থেকে ১২টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করার। যুক্তফ্রন্ট নেতারা মনে করছেন, জোট হিসেবে ছোট হলেও যুক্তফ্রন্টে কমপক্ষে ১৫ জন সম্ভব্য প্রার্থী আছেন যারা অতীতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী অথবা সংসদ সদস্য ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) রাতে গণভবনে আলোচনা করতে গিয়ে যুক্তফ্রন্টের ২৩ জন আগ্রহী প্রার্থীর নামের তালিকা দেন বি. চৌধুরী।
জানা গেছে, এই ২৩ জনের মধ্য থেকে অন্তত সাত জনের ব্যাপারে আ. লীগের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের বি. চৌধুরীকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তফ্রন্ট যেন দু’জন নেতার নাম পাঠায়।
এরই মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি. চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জোট শরিকদের জন্য ৬০ থেকে ৭০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেখান থেকেই সাতটি আসন বি. চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।
এই সাতটি আসনের মধ্যে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান লড়বেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি. চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে, শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে, গোলাম সরোয়ার মিলন মানিকগঞ্জ-২ আসনে, এস এম গোলাম রেজা সাতক্ষীরা-৪ আসনে ও এম এম শাহীন মৌলভীবাজার-২ আসনে এবং বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি লড়বেন নীলফামারী-১ আসনে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য, ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়াল মিলন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্যার (বি. চৌধুরী) প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি তালিকা দিয়ে এসেছেন। সেখানে ২৩ জনের নাম আছে। এর ভেতর থেকে ক’জনকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটা এখনো ফায়সালা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুই জনের নাম পাঠাতে বলেছিলেন। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান ও মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরীকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
সূত্রমতে, প্রথামকিভাবে যে সাতটি আসন নিয়ে যুক্তফ্রন্টকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, তাদের বাইরে আরও অন্তত পাঁচটি আসনের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষি করছে যুক্তফ্রন্ট। এই পাঁচটির মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আসনে তারই ছোট ভাই আজাদ সিদ্দিকীকে নৌকা প্রতীকে দাঁড় করাতে চান বি. চৌধুরী। অন্যদিকে, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর চট্টগ্রাম-২ আসনে নৌকা প্রতীকে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহ মো. মাজহারুল হককে নির্বাচন করাতে চান তিনি।
যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের কাছে আসন চাওয়ার ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিছু বিষয় মাথায় রেখেছেন বি. চৌধুরী। যেসব জায়গায় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী নেই, কিন্তু নৌকা প্রতীক পেলে যুক্তফ্রন্ট নেতারা জিতে আসতে পারবেন, সেসব আসনই চেয়েছেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মাহী বি চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন প্রবীণ রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, সাবেক একাধিকবারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। এই হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ-১ এ লড়াই করার মতো নেতা আওয়ামী লীগে নেই। বি. চৌধুরীর পারিবারিক ঐতিহ্য এবং ব্যক্তিগত ইমেজ কাজে লাগিয়ে এ আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন মাহী বি. চৌধুরী। এ কারণেই এ আসনটি যুক্তফ্রন্টের জন্য ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মেজর (অব.) মান্নানের সম্ভব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা জাতয়ি সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। ধানের শীষের বিপরীতে এ আসনটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেজর (অব.) মান্নান মাঠে নামলে নৌকার পাল্লা ভারি থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সে চিন্তা থেকেই এ আসনটি যুক্তফ্রন্টকে ছাড়তে চায় আওয়ামী লীগ।
শমসের মবিন চৌধুরীর জন্য সিলেট-৬ আসন চেয়েছেন বি. চৌধুরী। যুক্তফ্রন্ট নেতারা মনে করেন, প্রাজ্ঞ কূটনীতিক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ আসনটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি থাকবে না। আর মৌলভীবাজার-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মো. মনসুরের বিপরীতে এম এম শাহীনকে নৌকা প্রতীকে ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই আসনে ধানের শীষ এবং নৌকার বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বতন্ত্র প্রতীকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এম এম শাহীন।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে গোলাম সরোয়ার মিলনকে ছাড়তে হলে সঙ্গীত শিল্পী মমোতাজকে সরে দাঁড়াতে হবে— এটা কোনো বড় বিষয় না আওয়ামী লীগের কাছে। আর জামায়াতের ঘাঁটি সাতক্ষীরা-৪ আসনটি যুক্তফ্রন্টের এস এম রেজার জন্য ছেড়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে, নীলফামারী-১ আসনটি জেবেল রহমান গানিকে ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ— এ বিষয়টি আগেই চূড়ান্ত হয়ে আছে। এ আসনটি নিশ্চিত হয়েই জেবেল রহমান গানি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে এসেছেন— এমনটিই গুঞ্জন রয়েছে।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
আওয়ামী লীগ ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা যুক্তফ্রন্ট