সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে কোন কোন দেশ?
২৪ নভেম্বর ২০১৮ ১১:০০
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
দ্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)-এর প্রকাশিত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
বর্তমান বিশ্বে শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব দ্বিতীয়। ২০১৫ সালে ইয়েমেন যুদ্ধ ও সৌদি জোটের সহিংসতা শুরু হলে বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে কঠোর হয়ে যায়। ইয়েমেন দুর্ভিক্ষ ও গৃহযুদ্ধকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে মানবসৃষ্ট ভয়াবহতম দুর্যোগ হিসেবে। এই পরিস্থিতির জন্য সৌদি আরবের দায় অনেকাংশে।
সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি সম্পৃক্ততা প্রকাশ পেলে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ঘোষণা দেয়, তারা সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করবে না। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যায়-নীতি চুলোয় দিয়ে বারবার বলছেন, সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি লোভনীয়! এজন্য তিনি সৌদি রাজপরিবারের পাশে থাকতে চান।
সর্বশেষ, বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড জানায়, তারা সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেছে। ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে, খাশোগি হত্যা ও ইয়েমেন ইস্যুতে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপরদিকে ফিনল্যান্ড জানায়, ইয়েমেন যুদ্ধে বেসামরিক লোকের হতাহতের ঘটনায় আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে দেশটি।
যদিও ইউরোপের এই দেশ দুটি সৌদি আরবে বৃহৎ অস্ত্র সরবরাহক নয়। তবে ইউরোপ পরাশক্তি জার্মানি সৌদিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের অস্ত্র রফতানি করে। মাত্র দুদিন আগেই জার্মানি ঘোষণা করে, তারা সৌদি আরবে সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন ও বিদ্যমান সব অস্ত্রচুক্তিও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে।
দেশগুলোর মধ্যে অস্ত্রচুক্তি হয়ে থাকে গোপনে অথবা অল্প কিছু তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়। তবে, দ্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) গত এক দশকে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রিতে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকা করতে চেষ্টা করেছে। এই তালিকায় সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে শীর্ষ দেশ হিসেবে স্বাভাবিকভাবে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই অবস্থান যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন এবং জার্মানির।
তবে, সৌদি আরবের কাছে ইউরোপের দেশগুলোর অস্ত্র বিক্রি সাম্প্রতিক সময়ে কমেছে। যেমন যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালে ৮৪৩ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করলে, ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ মিলিয়ন ডলারে। ফ্রান্স ২০১৫ সালে সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করে ১৭৪ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র। তবে ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৯১ মিলিয়ন ও ২০১৬ সালে মাত্র ২৭ মিলিয়নে।
এদিকে স্পেন জানিয়েছে, দেশটির অস্ত্র উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর চাপে তারা সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি বাড়াবে। যদিও বিগত বছরগুলোতে তা কমে গিয়েছিলো।
খালিচোখে বেশিরভাগ দেশের অস্ত্র বিক্রি সৌদিতে কমলেও বিপরীতে সৌদি আরবের অস্ত্র আমদানি বেড়েছে। এমনকি ২০১৬-২০১৭ সালে তা বেড়েছে শতকরা ৩৮ ভাগ। এবং নির্দ্বিধায় এর কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সৌদিতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রফতানি এই সময়কালে বেড়েছে ১.৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩.৪ বিলিয়ন ডলার।
অপরদিকে, জার্মানির অস্ত্র বিক্রি ১৪ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়েছে ১০৫ মিলিয়ন ডলারে। তবে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন তা কমবে।
অর্থাৎ সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি নেই কেউ। বিগত পাঁচ বছরের পর্যালোচনায় দেখা যায়, সৌদি আরবের ৬১ ভাগ অস্ত্রই সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর যুক্তরাজ্য ২৩ ভাগ ও ফ্রান্স ৪ভাগ।
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সৌদি আরবের সাথে অস্ত্রচুক্তি বাতিল করা হবে বোকামি। রাশিয়া ও চায়না এই সুযোগটা নিয়ে নেবে। তবে পরাশক্তি এই দেশদুটি খুবই অল্প অস্ত্র সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করার সুযোগ পায়। তবে সৌদিতে চীনের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে।
এসআইপিআরআই-এর সিনিয়র গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেন, রাশিয়া গত দশ-পনের বছর ধরে সৌদি আরবের অস্ত্রের বাজারে ব্যবসা করতে চাইছে। তবে তারা সফল হয়নি। অস্ত্রবাহী ড্রোনসহ বেশ কিছু অস্ত্রের ক্ষেত্রে চীন ভালো করছে। চীনের ভূমিকা সঠিকভাবে এখন অনুমান করা না গেলেও তারা কেউই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্সের সমপর্যায়ে আসতে পারবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো সৌদি আরব তার অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে।
সারাবাংলা/এনএইচ