ক্যান্সারে আক্রান্ত কর্মীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা স্যামসাংয়ের
২৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৬
।।আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
স্যামসাং কোম্পানির কারখানায় কাজ করে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে এমন কর্মীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ওই কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও জানিয়েছে তারা। খবর এনপিআর’র।
শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের ডিভাইস সলিউশন্স ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও কিনাম কিম এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমাপ্রার্থনার অংশ হিসেবে জনসম্মুখে মাথা নত করেন।
তিনি বলেন, প্রিয় সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা বহুদিন ধরে কষ্টে ভুগেছেন। স্যামসাং এই বিষয়টি আগে সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে। স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স আমাদের চিপ ও তরল-ক্রিস্টাল ডিসপ্লে উৎপাদনে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টিও পুরোপুরি সামলাতে পারেনি।
এনপিআর’র প্রতিবেদন অ্যান্থনি কুহন জানিয়েছেন, স্যামসাংয়ের কারখানায় কাজ করে কয়েক ডজন কর্মী ক্যান্সার, লিউকেমিয়া ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু কিম তার সম্মেলনে, কর্মীদের এস রোগের জন্য স্যামসাংয়ের কারখানাকে সরাসরি দায়ী করেননি।
২০০৭ সালে ট্যাক্সি চালক হোয়াং সাং-গি’র মেয়ে ইউ-মি স্যামসাংয়ের একটি কারখানায় কাজ করে লিউকেমিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হোয়াং তার মেয়ের মৃত্যুর পর স্যামসাংয়ের কর্ম পরিবেশ নিয়ে চাপ সৃষ্টি শুরু করেন। এরপরই এসব বিষয়ে নজর দিতে বাধ্য হয় স্যামসাং।
হোয়াং বলেন, বিগত ১১ বছর ধরে আমরা স্যামসাং থেকে যে পরিমাণ প্রতারণা ও অপমানের শিকার হয়েছি তার জন্য কোন ক্ষমাপ্রার্থনা পর্যাপ্ত নয়। পেশাগত কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে ভোগা ও প্রিয়জনদের হারানোর বেদনার জন্য ক্ষমা হয় না।
তিনি বলেন, কিন্তু এই ক্ষমাপ্রার্থনা নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নের ইঙ্গিত।
উল্লেখ্য হোয়াং হচ্ছেন অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘সাপোর্টার্স ফর দ্য হেলথ এন্ড রাইটস অফ পিপল ইন দ্য সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি’র (শার্পস) একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
স্যামসাংয়ে কাজ করে জটিল রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৯
ইয়েল এনভায়রনমেন্ট ৩৬০ অনুসারে, ইউ-মি মারা যাওয়ার এক বছরের মধ্যে একই কর্মস্থলের অপর এক নারী কর্মী লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এছাড়া ২০১০ সালে স্যামসাংয়ের অন-ইয়াং সেমিকনডাক্টর প্রকল্পের কর্মী পার্ক জি-ইয়েওন (২৩) লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২০০৫ সালে স্যামসাংয়ের এলসিডি প্রকল্পের কর্মী হান হায়ে-কিয়ং(২৭) ব্রেইন টিউমরে আক্রান্ত হন। বর্তমানে তিনি গুরুতর শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত। জীবন পার করছেন প্রতিবন্ধী হিসেবে। স্যামসাংয়ের অপর একটি সেমিকন্ডাক্টর কারখানায় ১৯৯৭-২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছিলেন লি ইয়ুন-জেয়ং নামের এক নারী। ২০১০ সালে ৩০ বছর বয়সে তার ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়ে।
স্যামসাং আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করেছে। রয়টার্স অনুসারে, স্যামসাং প্রতি সাবেক ও বর্তমান কর্মীকে, যারা কর্মক্ষেত্রে রোগের শিকার হয়েছেন, তাদের ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৪৯.৪৫ ডলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেবে।
স্যামসাংয়ে কাজ করে ঠিক কতজন কর্মী ক্যান্সার বা এমন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তার কোন নির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে শার্পস’কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এরকম রোগের শিকার হয়েছেন ৩১৯ জন ব্যক্তি। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১১৭ জন।
সারাবাংলা/ আরএ