Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাঁচ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারির বেতন বন্ধ জয়পুরহাট চিনিকলে


২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:১০

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

জয়পুরহাট: দেশের সবচেয়ে পুরান ও বৃহত্তম চিনি কলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছল-আনন্দময় জীবন থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে স্বর্ণালী দিন। চিনি কলটিতে নেই প্রাণের স্পন্দন।

এর আগে বহুবার তাদের বেতন-ভাতা বকেয়া থাকলেও এবারের মতো দীর্ঘস্থায়ী বেতন বকেয়া থাকতে দেখেনি তারা। গত দুই মাস ধরে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর প্রায় ২ কোটি টাকা বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। সময় মতো বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর। অর্থনৈতিক সংকটে আছে অনেকেই।

জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক খালাসি রমজান আলীর চাকুরীর বয়স ৫৫ বছর। তিনি দুই যুগেরও বেশি সময় পার করেছেন দেশের সবচেয়ে পুরনো এই চিনি কলে। যৌবনের প্রথমভাগে চিনিকলের চাকরির সঙ্গে ভালো বেতন ছিল বলে রমজান আলীর জীবনটাই ছিল স্বচ্ছল। তবে গত দুমাস ধরে বেতন না পাওয়ায় তার অবস্থা খুবই দুর্বিসহ। বেতন নেই বলে কখনো তাকে রিকশা চালাতে হয়, কখনো আবার বন-জঙ্গলের প্রাকৃতিক শাক-সবজি তুলে বিক্রি করে তা দিয়েই চালাতে হয় সংসার।

জয়পুরহাট চিনিকলের আরেক শ্রমিক বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী জাফর আলী। তিনিও কয়েক মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় অফিস শেষে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চানাল পরিবারকে না জানিয়ে।

শুধু জাফর আলী ও রমজান আলীর মতো ওয়ার্কশপ হেলপার সমারু কর্মকার, ইলেকট্রিক মেকানিক প্রশান্ত কুমার, মিল হাউজের ফোরম্যান রফিকউদ্দিনসহ অনেকেই অফিস শেষে অন্য পেশায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

জয়পুরহাট চিনিকলে ১ হাজার ৩০ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে দুরাবস্থার শিকার ৫৩০ জন স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারী বেতন পাননি গত ২ মাস ধরে। অন্যদিকে মৌসুমী ও চুক্তিভিক্তিক শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে ৫০০ জন। তারাও কাজে যোগ দেবে আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

চিনিকল প্রশাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ২১৭ একর জমির ওপর জয়পুরহাট চিনিকলের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৩ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাট চিনি কলটির প্রথম আখ মাড়াই শুরু হয়। গত মৌসুমের উৎপাদিত ১ হাজার চার শ মেট্রিক টন চিনির মূল্য সাড়ে ৭ কোটি টাকা এবং ৩ হাজার ৩ শ মেট্রিক টন চিটাগুড় (মোলাসেস)-এর মূল্য ৪ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা যা এখনো অবিক্রিত রয়েছে। অবিক্রিত থাকার কারণেই শ্রমিক কর্মচারী-কর্মকর্তার বেতন ভাতা বকেয়া রয়েছে।

দীর্ঘদিন থেকে মিলের কর্তা ব্যক্তিরা মিলের উৎপাদিত চিনি ও মোলাসেস বিক্রি করে বেতন নেওয়ার কথা বলে আসছিলেন, এদিকে বাজারে চিনিকলের চিনি ও বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির চিনির মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকায় শ্রমিকদের বেতন ১৬ শতাংশ লোকসানে নিতে হবে, এই কারণে শ্রমিকরা তাদের বেতন না নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকে, এই প্রেক্ষিতে মিল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন খাত থেকে সমন্বয় করে সম্প্রতি এক মাসের বেতন দিয়েছে।

জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এই শিল্পকে রক্ষা করা খুবই কঠিন, যদি বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো প্রকল্প-এর সাথে যুক্ত করা না হয়, শুধু বেতন ভাতা কেন, দিন-দিন এই শিল্প আরও খারাপের দিকে যাবে।

জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে কর্মরত শ্রমিক খুরশীদ আলম জানান, সুগারমিলে তরল সুগার, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার কিন্ত এখন আমাদের আপৎকালীন সমস্যা সমাধানে অন্যান্য সেক্টরের মত চিনি শিল্পতেও যদি সরকার ভর্তুকি দেয় তাহলেই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। এ ছাড়াও সুগারমিলের চিনির দাম কমে দিয়ে বিক্রি করেও সমাধান করা যায়। মিল কর্তৃপক্ষ কচু চাষসহ বিভিন্ন প্রকল্প যে হাতে নিয়েছে এখানে শুধু বিক্রির টাকার কথা বলা হচ্ছে উৎপাদন ব্যয়ের কথা বলা হচ্ছে না, এতে করে মিলের ব্যয় যদি অতিরিক্ত হয় সেটাই মিলের জন্য ক্ষতি।

বিজ্ঞাপন

জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, বেসরকারি চিনিকলগুলো বাইরে থেকে তরল সুগার নিয়ে এসে কম মূল্যে চিনি উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। আর আমরা আখ থেকে চিনি তৈরি করার কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় চিনি কম মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ক্রেতারা যে চিনি কম দামে পাবে সেটাই কিনবে। আমরাও যদি কম দামে চিনি বিক্রি করি অন্যান্য কোম্পানিগুলোও চিনির দাম কমিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, চিনির মূল্যে যদি লবণের মূল্যের কাছাকাছি আসে তাহলে এ শিল্প ভালো করবে না। সব কিছুর দাম বাড়লেও চিনির মূল্যে কমে বর্তমানে ৪০-৪২ টাকা কেজি। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চিনি শিল্প রক্ষার কাজ করা হচ্ছে এ শিল্পকে লাভজনক করতে হলে মূল্যে বৃদ্ধি করাসহ বেশি বেশি আখ রোপন করতে হবে তাহলে এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে। আখের মূল্যে ৬০ টাকা মন থেকে এখন ১৪০ টাকা করা হয়েছে। মিলের উৎপাদিত চিনি ও মোলাসেস বিক্রি করে বেতন নিতে হবে এবং এ খাতে সরকারের সরাসরি টাকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কোনো ব্যাংকই সুগারমিলকে ঋণ দেবে না, তাই যা আছে তা দিয়ে সমন্বয় করে চলতে হবে এবং এই সমস্যা সম্পর্কে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে ভালোভাবে বুঝত হবে।

সারাবাংলা/এমআই

আরও পড়ুন

রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে সহায়তা দিতে চায় ভারত

 

চিনিকল জয়পুরহাট বকেয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর