‘পুলিশের কো-অর্ডিনেশনে সেনাবাহিনী দুরভিসন্ধিমূলক’

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: নির্বাচনে পুলিশের কো-অর্ডিনেশনে সেনাবাহিনী রাখার সিদ্ধান্ত দুরভিসন্ধিমূলক বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রোববার (২৫ নভেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনী পুলিশের সমন্বয়ের (কো-অর্ডিনেশন) মধ্যে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— যা নজিরবিহীন ও দুরভিসন্ধিমূলক। পুলিশের কমান্ডে কী করে সেনাবাহিনী কাজ করবে? সেনাবাহিনীকে আর কত ছোট করা হবে?‘

তিনি বলেন, ‘সাধারণত সেনাবাহিনী যেখানে ডেপ্লয়মেন্ট হয় সেখানে রাষ্ট্রের অন্যান্য বাহিনী (বিজিবি, পুলিশ, আনসার ইত্যাদি) সেনাবাহিনীর কমান্ডেই কাজ করে। এটাই বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন নিয়ম। যে সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে গর্বিত বাহিনী হিসেবে সকলের নিকট সমাদৃত হয়েছে, সেই বাহিনীকে আর কত নিচু করা হবে?’

রিজভী বলেন, ‘যে সেনাবাহিনী আমাদের জাতীয় দুর্যোগ-দূর্বিপাক মোকাবেলায় মানুষের জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত গতিতে ছুটে যায়, সেই বাহিনীকে আর কত হেয় করা হবে?’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ না করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। শনিবার (২৪ নভেম্বর) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে ব্রিফিংয়ে সিইসি এ নির্দেশনা দেন।

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে আপনারা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবেন না। পুলিশ ইসির নির্দেশে কাজ করছে, ইসির নির্দেশ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করছে না।

এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ‘সিইসি বলেছেন- পুলিশ ইসির নিদের্শ মতোই কাজ করছে। সুতরাং সিইসি স্বীকার করে নিলেন যে, সারাদেশে যত হামলা, মামলা, গায়েবি মামলা, গ্রেফতারসহ যা কিছু হচ্ছে সিইসির নির্দেশেই হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যশোরের বিএনপি নেতা ও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর আবুর লাশ বুড়িগঙ্গায় ভেসে ওঠাটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

তার বক্তব্যে পরিষ্কার হলো, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন চান না, যে করেই হোক আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসাতে হবে— এটাই কমিশনের মনোবাসনা। একতরফা নির্বাচন করতে, দেশে এক নায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার জন্য নয়’— বলেন রিজভী।

সিইসির বক্তব্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেপরোয়া করে তুলবে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যেতে পারবেন না, সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না, পর্যবেক্ষকদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করতে হবে, তাহলে কি শুধুমাত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী আর আওয়ামী চেতনায় সাজানো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মিলে নির্বাচন করবে?’

রিজভী বলেন, ‘ভোট ডাকাতির সুযোগ করে দিতেই যাবতীয় আয়োজন করা হচ্ছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। বর্তমানে যে পরিবেশ বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে কোনো ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবে না। সুতরাং সিইসির বক্তব্যে পরিষ্কার হলো যে, অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায় তিনি নিজেই।’

সারাবাংলা/এজেড/এটি