যৌন হয়রনি প্রতিরোধে পূর্ণাঙ্গ আইনের দাবি
২৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৩১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতের প্রণয়ন করা নীতিমালাকে পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে রূপ দেওয়া ও তার বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন নারী অধিকার কর্মীরা।
‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তারা বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। কোনো পুরুষের দ্বারা কোনো নারী হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হয় না— তেমন একটি সমাজের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
বিশ্বব্যাপী এই প্রতিরোধ পক্ষ পালন করা হয় ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নারী ও মেয়ে শিশুদের প্রতি জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা দূর করা এবং সব ধরনের বৈষম্য কমিয়ে আনার দাবিকে জোরালো করতে এই প্রতিরোধ পক্ষ বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন পক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘#হিয়ার মিটু-অ্যান্ড ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইম্যান অ্যান্ড গার্লস’ (নারী ও কন্যা শিশুদের প্রতি সহিংসতা, হয়রানি ও বৈষম্যের কথা শুনতে হবে ও বন্ধ করতে হবে)। ‘নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের এখই সময়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই প্রতিরোধ পক্ষ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এরই অংশ হিসেবে রোববার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অংশগ্রহণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এখনও ঘরে-বাইরে সব জায়গায় সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা। প্রতিবন্ধী নারী ও কন্যা শিশুরাও এর বাইরে নেই। ২০১৫ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, গ্রামীণ বিবাহিত নারীদের মধ্যে শতকরা ৭৪ দশমিক ৮ ভাগ ও শহরে বিবাহিত নারীদের মধ্যে শতকরা ৭১ দশমিক ১ ভাগ নারী সহিংসতার শিকার।
‘তাই আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে নারী পুরুষ একসঙ্গে বসবাস করতে পারে, যেখানে কোনো পুরুষের দ্বারা কোনো নারী হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হবে না— তেমন একটি সমাজের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল, পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে তার বাস্তবায়নেরও দাবি জানাই,’— সমাবেশে বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস আরা রুমী সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১১ জন নারী তাদের প্রতি হওয়া যৌন সহিংসতা বিষয়ে মুখে খুলেছে #মিটু প্ল্যাটফর্মে। আমি বলতে চাই, মেয়েদের বলার জায়গাটা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, এসব মেয়েরা যেন কেউ ভিক্টিম ব্লেমিংয়ের শিকার না হন। আজ যদি মেয়েদের বলার জায়গাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বলার পথটাও বন্ধ হয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন #মিটু না লিখতে হয়, সে জন্য এরই মধ্যে প্রকাশ হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্তসাপেক্ষে বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।
নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা রোধে নারীদের বলার যে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যে সূচনা হয়েছে, তাকে যেন প্রশ্নবিদ্ধ না করে ফেলি আমরা,— বলেন রুমী।
অনুষ্ঠানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের আন্দোলন কারও একার আন্দোলন নয়, এটা আমাদের সবার আন্দোলন। যুগের পর যুগ চলে গিয়েছে, অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হয়নি। এত এত নারী আন্দোলন, সরকার ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর এত কাজের পরও নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
সমাবেশে অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন, আইন সালিস কেন্দ্র, পিএসটিসি, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, সিপিডি, ডিএএম, নারী মৈত্রী, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন, ভাফুসড, সহায়, সবুজের অভিযান, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, এএসডি, নারীপক্ষ, সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্ক, এক রঙা এক ঘুড়ি, গ্লোবাল নেইবারস, ভার্ক, কর্মজীবি নারীসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/জেএ/টিআর