উন্মুক্ত পাঠাগারে ঝুঁকছেন জবি শিক্ষার্থীরা
২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:২৪
।। জগেশ রায়, জবি করেসপন্ডেন্ট ।।
কলা অনুষদের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নিচতলার একটি রুমে রয়েছে ৪৯টি বেঞ্চ। একেকটি বেঞ্চে দু’জন করে বসতে পারলেও বেশিরভাগ বেঞ্চেই বসে আছেন তিন জন। এরও প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাইরে, কখন কেউ একজন পড়া শেষ করে উঠবেন। নেই বই বা ব্যাগ রাখার ব্যবস্থা। বৈদ্যুতিক পাখাগুলো অনেক উঁচুতে, দীর্ঘদিনেও পরিষ্কার করা হয় না। নেই খাবার পানি ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থা। তবু সেখানে শিক্ষার্থীদের ভিড় কমে না।
কোনো ক্লাসরুম নয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উন্মুক্ত পাঠাগারের চিত্র এটি। জবি’র ওই রুমটি প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (বিভাগীয় পরীক্ষার দিন বিকেল ৪টায় খোলা হয়) ব্যবহার করা হয় পাঠাগার হিসেবে। এই পাঠাগারের পাঠক সংখ্যা এতই বেশি যে পাঠাগার খোলার এক ঘণ্টা আগে থেকেই সারি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। ব্যাগ দিয়েও লাইন করে জায়গা রাখতে দেখা যায়।
একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই এই উন্মুক্ত পাঠাগারে ঝুঁকছেন জবি শিক্ষার্থীরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই থাকতে হয় পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকার মেসে। সেখানে থাকে না পড়ালেখার পরিবেশ। যে কারণে নিত্যদিনের পড়ালেখা, ক্লাস, পরীক্ষার বাইরে চাকরির পরীক্ষা বা বাড়তি পড়ালেখার জন্য এই উন্মুক্ত পাঠাগারই ভরসা তাদের।
জবি বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য তো লেখাপড়া শেষে যত তাড়াতাড়ি একটি চাকরি পাওয়া। আমাদের তো হল নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতেও জায়গা নেই। তাই এই উন্মুক্ত পাঠাগার হওয়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। তবে এখানেও লম্বা লাইন। মাঝে মাঝে জায়গার অভাবে ফিরে যেতে হয়।
সমাজকর্ম বিভাগের জুয়েল রানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্ত পাঠাগার হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। তবে জায়গা কম। আমরা চাই, এই পাঠাগার সম্প্রসারিত হোক।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, জবিতে হল ও রিডিং রুম নেই। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারেও রয়েছে আসন স্বল্পতা। তাই প্রতিটি বিভাগ না হলেও অন্তত প্রতিটি অনুষদে একটি করে উন্মুক্ত পাঠাগার খোলার দাবি জানান তারা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দুপুর ১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এমন কঠোর নিয়ম-কানুনের বাইরে পড়ার স্থান মিললে তা তাদের জন্য ভালো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আতিয়ার রহমান সারাবাংলাকে বলেন, পাঠাগারের রুমটি আমার বিভাগের অধীনে হলেও পাঠাগারের দায়িত্ব আমার না। প্রশাসন অনুদান দিলে রুমটিতে পানির ব্যবস্থা করব। বাথরুম ও অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কথা বললে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উন্মুক্ত পাঠাগার সম্প্রসারণে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, পাঠাগার সম্প্রসারণের জন্য জায়গার দরকার। আমাদের নতুন ভবনের ওপরের কাজ শেষ হলে কিছু রুম খালি হবে। ওই রুমগুলোতে উন্মুক্ত পাঠাগার স্থাপন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের ২৯ মে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একটি অংশ অস্থায়ীভাবে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে এক সেমিস্টারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে গ্রন্থাগারটি আরও ছোট হয়ে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করলে জবি উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত পাঠাগারের আশ্বাস দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নিচ তলার একটি রুমে গত ২৩ এপ্রিলে উন্মুক্ত পাঠাগার উদ্বোধন করেন জবি উপাচার্য।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর