‘শ্যাম রাখি, না কুল রাখি’ অবস্থা বিএনপির
২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৩৯
।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: টানা ১২ বছর ক্ষমতায় বাইরে থাকা বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ‘শ্যাম রাখি, না কুল রাখি’ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। নিজেদের সাড়ে চার হাজার আগ্রহী প্রার্থীসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের আগ্রহী প্রার্থীদের আসন সমন্বয় নিয়ে দলটির এখন গলদঘর্ম অবস্থা।
আসন সমন্বয় করার জন্য শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।পরের দিন শনিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত একই স্থানে ফের বৈঠক করেন তারা। এরপর রোববার (৬ নভেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গুলশান কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
মাশরাফির বিরুদ্ধে লড়তে ধানের শীষ পেলেন ফরহাদ
এসব বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমদু চৌধুরী, নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, ২০ দলীয় জোটের শরিক জামিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাস, এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান পর্যায়ক্রমে অংশ নেন।
কিন্তু এসব বৈঠকে আসন সমন্বয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা শেষ পর্যন্ত মুখভার করে গুলশান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে পারে, আবার কাছেও আসতে পারি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকেরা বিএনপির কাছে কমপক্ষে ৯০টি আসন চায়। এর মধ্যে জামায়াত অন্তত ৩৫টি, এলডিপি ৮টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৩টি, বিজেপি ২, জাগপা ২টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, খেলফত মজলিস ১টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ১টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১টি, এনপিপি ১টি। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চার শরিক গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য কমপক্ষে ৩৫টি আসন চায়। কিন্তু দুই জোটের শরিকদের সর্বোচ্চ ৫০টির মতো আসন ছাড়তে চায় বিএনপি।
সেক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ২০টি, জামায়াত ১৭টি, এলডিপি ৪টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৩টি, বিজেপি ১টি, জাগপা ১টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, খেলাফত মজলিস ১টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ১টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টিকে ১টি করে আসন ছাড়তে চায় বিএনপি। আর এতেই তৈরি হয়েছে লেজেগবুরে অবস্থা।
কারণ, গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসীন মন্টু চান ঢাকা-২ বা ঢাকা-৩। কিন্তু এ দুটির একটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও অন্যটিতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান। সুতরাং এই দুই আসন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া বিএনপির জন্য কেবল কঠিন নয়, অসম্ভবও বটে।
অন্যদিকে বিএনপি জোটের অন্যতম প্রধান শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম চট্টগ্রাম-১৪ থেকে নির্বাচন করবেন। ধানের শীষ এবং নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে ছাতা মার্কায় নির্বাচন করে ২০০৮ বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার এই আসন চান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ নেতা সুব্রত চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েছে বিএনপি।
রোববার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদে সঙ্গে বৈঠকে চট্টগ্রাম-১৪ এবং ঢাকা-২ ও ৩ আসন নিয়ে কথা বলেন বলেন সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মহসীন মন্টু। কিন্তু সেখানে কোনো ফায়সালা না হওয়ায় ‘মুখ ভার’ করে বেরিয়ে যান তারা।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পিরোজপুর-১ আসনে তার ছেলে শামীম সাঈদী নির্বাচন করতে চান। এ আসনটি কিছুতেই ছাড়তে চাচ্ছে না জামায়াত। কিন্তু বিএনপি এই আসন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারকে দিতে চায়।
বিএনপির ঘাঁটি বগুড়া-২ আসনে নির্বাচন করতে চান নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ২০০৮ সালে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন এ কে এম হাফিজুর রহমান। নাগরিক ঐক্যের আরেক নেতা এস এম আকরাম নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনে প্রার্থী হতে চান। সেখানে বিএনপির চারবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদও মনোনয়ন প্রত্যাশী। ফলে নাগরিক ঐক্যর সঙ্গে আসন সমন্বয় করতে গিয়ে অগ্নি পরীক্ষায় পড়েছে বিএনপি।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করতে চান টাঙ্গাইল-৮ আসনে। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান ধানের শীষের শক্ত প্রার্থী।লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী আছেন আশরাফ উদ্দিন নিজান। এ আসনটিতে নির্বাচন করতে চান জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। জেএসডির মহাসচিব আবদুল মালেক রতন নির্বাচন করবেন কুমিল্লা-৪ আসনে। সেখানে বিএনপির শক্ত প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী কিছুতেই আসন ছাড়তে চাচ্ছেন না। তাকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা ঠিক, আসন সমন্বয় নিয়ে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছি। বড় দল হিসেবে এ সমস্য থাকবেই। তবে বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীদের যেমন ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে, তেমনি জোট শরিকদেরও বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’
সারাবাংলা/এজেড/এমআই
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুকে উপলব্ধি করে বেড়ে উঠেছি: মাশরাফি