‘নির্বাচনে সংঘাত-রক্তপাত-প্রাণহানি চাই না’
২৬ নভেম্বর ২০১৮ ১২:২৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, আমরা চাই একটা নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘাত, কোনো রকম রক্তপাত অথবা প্রাণহানি হোক এটা আমরা চাই না।
সোমবার (২৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবন অডিটোরিয়ামে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটদের তিন দিনব্যাপী ব্রিফিংয়ের শেষ দিনের কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় সিইসি এসব কথা বলেন।
ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, যেকোন মূল্যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। অবাধ মানে ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়িতে যাবে এবং বাড়িতে গিয়ে নিরাপদে বসবাস করবেন। আর চারদিকের পরিবেশ নিরাপদ রাখার দায়িত্বে আপনারা থাকবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেদিনটা আপনাদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্বপালন করতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক সময় আপনাদেরকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আপনাদেরকে বিচলিত করে, অনেক সময় আপনাদেরকে নানা কারণে উসকানিমূলক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। আপনাদেরকে মিসগাইডিংয়ের মধ্যে ফেলে দেয়। সেই সমস্ত অবস্থাগুলো আপনাদেরকে বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা, ক্ষিপ্রতার মাধ্যমে এগুলো বুঝতে হবে যে, আসলে অবস্থা কি?
তিনি আরও বলেন, কোনো ঘটনা সত্য বা মিথ্যা তা আপনাদের বুঝতে হবে। আধুনিক এই যুগে কেন্দ্র, প্রিজাইডিং অফিসার, আপনাদের সহকর্মী যারা থাকবেন তাদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ থাকতে হবে। যাতে তাৎক্ষণিকভাবে সেই এলাকার অবস্থা জানতে পারেন।
সিইসি বলেন, কখনো ধৈর্য্যচ্যুত হলে চলবে না। কোনো বিভ্রান্তকর পরিস্তিতির মধ্যে পড়লে সহনশীল থাকতে হবে এবং বুঝে, জেনে, শুনে অ্যাকশনে যেতে হবে। চরম অ্যাকশন যেটা বলা হয়, সেটাকে যতদূর পারেন আপনারা নিজেদের বিবেচনায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণ যদি করতে পারেন তাহলে পরিবেশ পরিস্থিত শান্ত হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা চাই একটা নির্বাচন। আমরা চাই না সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘাত হোক এবং সেখানে কোনো রকম রক্তপাত হোক অথবা প্রাণহানি হোক। এইগুলোকে সামলানোর জন্য, দেখভাল করার জন্য আপনাদের দায়িত্ব। নির্বাচনের দিন, নির্বাচনের পূর্বে এবং পরে এই সময় আপনাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে থাকতে হবে।
সিইসি আরও বলেন, আচরণবিধি ভালোভাবে রপ্ত করবেন। আচরণবিধি প্রয়োগ করতে গিয়ে যেনো এমন কোনো কাজ করবেন না। যাতে একটা নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বারবার বলি আপনারা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট। সুতরাং সেই বিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনাদের কাজ করতে হবে। যাতে কখনো নির্বাচনের পরিবেশ পরিস্থিতি ব্যাহত না হয়।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা আমরা নির্বাচন করবো। নির্বাচন উঠিয়ে নিয়ে আসবো। সেখানে সেই পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই দায়িত্বটুকু আপনাদেরকে পালন করতে হবে। সেটা পালন করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে এবং পালন করতে হবে আচরণবিধি এ সংক্রান্ত কিছু আইনের ধারা আয়ত্বের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। নিরপক্ষতা থাকতে হবে এবং ক্ষিপ্রতা থাকতে হবে। কখনো নিজেদের আইনকানুনের অবস্থান থেকে চ্যুত হবেন না এবং সব থেকে বড় কথা হলো আপনাদের ধৈর্যসহকারে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। কাউকে বিরক্ত করে বা বিরক্তভাজন হয়ে নয়।
ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, এবারের নির্বাচন আমাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসী এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু, স্বাভাবিক, শুদ্ধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না, তা হতেই পারে না। আমরা আমরা কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে কলঙ্কিত হতে চাই না। নির্বাচনে যে কেউ জয়ী বা পরাজিত হতে পারে। দেশবাসী যেনো পরাজিত না হয়।
গত তিন দিনে সারাদেশের ৬৯১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্রিফিং দেয় কমিশন। ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ-এর সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, বিগ্রেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/ জিএস/এমআই/জেডএফ