।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়ে ঢাকা থেকে ফেরার পথে নিজ নির্বাচনি এলাকায় বড় ধরনের শো-ডাউন করেছেন চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-কাট্টলী) আসনের প্রার্থী দিদারুল আলম। মোটরসাইকেলে বহর নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিলের সময় নেতা-কর্মীরা ‘নৌকা, নৌকা’ বলে স্লোগান দেন। চট্টগ্রামে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, শোডাউনের মাধ্যমে নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন হয়েছে।
সোমবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাট থেকে নগরীর সিটি গেট পার হয়ে উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত এই মিছিল হয়েছে। কাট্টলীতে দিদারুল আলমের বাড়ি মোস্তফা হাকিম ভবনের সামনে এসে শেষ হয় মিছিল।
মনোনয়ন না পাওয়ার জোরালো গুঞ্জনের মধ্যে রোববার দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত নৌকা প্রতীকের চিঠি পান দিদারুল আলম। দলীয় সেই মনোনয়ন পত্র নিয়ে সোমবার সকালে তিনি সড়কপথে ঢাকা থেকে রওনা দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দিদারুল আলমকে বহনকারী পাজেরো গাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় দারোগারহাটে এসে পৌঁছায়। সেখানে কয়েক শ’ নেতা-কর্মী আগে থেকেই হাজির ছিলেন। দিদারুল আলমের গাড়ি পৌঁছালে তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় নৌকা প্রতীকের নামে স্লোগান ওঠে। নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল ফুল দিয়ে তৈরি নৌকা। এছাড়া দিদারুল আলমের গাড়ির সামনে ছিল ‘সংসদ সদস্য’ লেখা স্টিকার।
বড় দারোগাহাট থেকে সামনে-পেছনে মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে শুরু হয় মিছিল। বহরের মাঝে জিপে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে সড়কের দু’পাশে জনতাকে সালাম দেন দিদারুল আলম। মহাসড়কে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা প্রদক্ষিণ করে নগরীর উত্তর কাট্টলীতে নিজ বাড়িতে ফেরেন দিদারুল আলম।
তবে দীর্ঘ মিছিলে দিদারুল আলম বারবার হাত নেড়ে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের স্লোগান দিতে নিষেধ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। শো-ডাউনের কারণে মহাসড়কে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়েছে বলেও জানান তারা।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আচরণ বিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহকারী কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনের ২১ দিন পূর্ব পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্বাচনি মিছিল-সমাবেশ, শো-ডাউন করতে পারবেন না। একজন সম্ভাব্য প্রার্থী যদি এটা করে থাকেন, তাহলে স্পষ্টত আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। সংশ্লিষ্ট আসনের নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আছে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-৪ সহ ৬টি আসনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা আমার নলেজে নেই। সীতাকুণ্ডের ইউএনওসহ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ছিলেন। এই ফাঁকে দিদারুল আলম সাহেব সম্ভবত শো-ডাউন করে ফেলেছেন। আমি এই বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে নির্বাচনি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
শো-ডাউনের বিষয়ে জানতে চাইলে দিদারুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়ন পাব কি পাব না, সেটা নিয়ে নানা কথা রটে গিয়েছিল। যখন পেয়ে গেছি, স্বাভাবিকভাবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। আমি কাউকে বলিনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নেমে গেছে।’
তবে মিছিলে নৌকা প্রতীক নিয়ে কোনো স্লোগান দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন দিদারুল আলম।
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের ভাতিজা শিল্পপতি দিদারুল আলম ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরোধিতার মুখে ছিলেন তিনি। এবার চাচা এম মনজুর আলমও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। ভাতিজাকে বাদ দিয়ে চাচাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলে চট্টগ্রামে গুঞ্জণ ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন দিদারুল আলম।
সারাবাংলা/আরডি/এটি