Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সহিংসতার শিকার ৯৭ শতাংশ নারী ‘বিচার’ পান না


২৬ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:০০

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার মোট ঘটনার দুই-তৃতীয়াংশই পারিবারিক সহিংসতা। আর সহিংসতার শিকার প্রায় ৯৭ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না, বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়। মাত্র ৩ শতাংশ ভুক্তভোগী নিজেদের পক্ষে বিচার পান।

সোমবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার উপর দৃষ্টিপাত: প্রবণতা এবং সমাধান’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন তথ্য তুলে ধরে একশনএইড বাংলাদেশ ও জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম জেএনএনপিএফ।

গবেষণার ফলে বলা হয়, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটি মামলাই আদালতে উত্থাপিত হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তারপর শুরু হয় বিচারিক প্রক্রিয়া।

একশনএইড বাংলাদেশ ও জেএনএনপিএফ ‘১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ উদযাপনের প্রেক্ষাপটে ২০টি জেলার ২৮০০টি ঘটনার তথ্য নিয়ে এই গবেষণা করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন গবেষক আহমেদ ইব্রাহীম।

গবেষণা নিয়ে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ঘরে-বাইরে সব জায়গায় আমরা নির্যাতন মেনে নিচ্ছি। আবার যেখানে গিয়ে নির্যাতনের সুরাহা বা বিচার পাওয়া উচিত, তা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নারীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। আমরা মেনে নিচ্ছি যে নারী ও শিশুর উপর নির্যতান করা যায়। তাই আমাদের সবার নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।

গবেষণার ফলে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৭৫ শতাংশ প্রতিবেদনই ধর্ষণ বা গণধর্ষণ সম্পর্কিত এবং তার বেশিরভাগই পারিবারিক সহিংসতার বিষয়। অর্থাৎ, গণমাধ্যম বাড়ির বাইরের সহিংসতা এবং যৌন সহিংসতাকে অধিক হারে তুলে ধরে। এভাবে ‘নারীরা বাড়িতে নিরাপদ’— এই ধারণাকে স্থায়ী করে রাখা হয়েছে। তবে গবেষণা বলছে, নারীরা ঘরেই বেশি অনিরাপদ।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন ‘নারীদের ছোটবেলা থেকেই যেকোনো সমস্যা লুকিয়ে রাখার শিক্ষা দেওয়া হয়। যতদিন পর্যন্ত আমাদের বিচারব্যবস্থা ন্যূনতম পর্যায়ের নিরপেক্ষ না হবে, ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না। আর এখানে গণমাধ্যম প্রচার ও প্রকাশনার মাধ্যমে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’

নারীর ওপর সহিংসতা ও বিচার না হওয়া বিষয়ে গবেষণায় কারণ হিসেবে বলা হয়, পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ দাখিল সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকে না। একইসঙ্গে এলাকার ক্ষমতাসীনদের বাধা ও হস্তক্ষেপ, সুশাসনের অভাব, ঘরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো সচেতনামূলক কার্যক্রম না থাকা এবং মামলা ধীরগতির কারণে ভুক্তভোগীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ নিয়ে যেতে চায় না। এছাড়া বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় সুনির্দিষ্ট আইন না থাকার কারণে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধেই রায় যায়।

নারী নেত্রী ও নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির বলেন, আমাদের সমাজে মনে করা হয়, নির্যাতন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আবার নির্যাতনের শিকার একজন নারী থানায় গিয়েও অভিযোগ দিয়ে সহযোগিতা পান না, হয়রানি করা হয় তাকে। আইনি জটিলতায় বিচার পেতে অনেক সময় লাগে। একজন নারী বা একটি পরিবারের পক্ষে টাকা খরচ বা সময় দিয়ে পরিশেষে বিচার পাওয়া খুবই কঠিন। সে কারণে অধিকাংশ মামলার বিচার আলোর মুখ দেখে না।

একইসঙ্গে গবেষণায় কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে— নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও গৃহে এর ব্যাপকতাকে নির্মূল করার জন্য একটি আইন করা ও তার বাস্তবায়ন করা; জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নারীরা যেন গৃহে সংঘটিত সব ধরনের সহিংসতা চিহ্নিত করতে পারে, সে বিষয়ে তাদের সচেতনতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি নারীরা যেন ঘটনার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিংবা অভিযোগ করতে পারে সেজন্য সব তথ্য দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং সঠিক উপায়ে আইনি অভিযোগ দাখিল করার বিষয়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নারীকে নির্দেশনা দেওয়া। পাশাপাশি গণমাধ্যমেরও পারিবারিক সহিংসতার বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে সুপারিশ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সহিংসতার নানা ঘটনা সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো ও বিভিন্ন পক্ষকে উদ্যোগী করতে একশনএইড বাংলাদেশ ও উন্মাদ ‘ফেমিটুন’ নামের একটি ভিন্নধর্মী কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন করে। গবেষণা প্রতিবেদটি প্রকাশের পর প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করে আয়োজকরা। নারীর প্রতি সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের কার্টুনিস্টরা এই কার্টুনগুলো আঁকেন। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, অবৈতনিক সেবামূলক কাজ, শহরে ও দুর্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে সহিংসতার চিত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে এসব কার্টুনে।

২৬ নভেম্বর শুরু হয়ে ২৮ নভেম্বর বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দৃক গ্যালারিতে চলবে এই প্রদর্শনী।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

নারীর প্রতি সহিংসতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর