‘জামায়াত-শিবির-হেফাজতসহ মৌলবাদী সংগঠনগুলোকে রুখতে হবে’
২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৫৩
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
‘জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবির এবং হেফাজতে ইসলামসহ এই ধরনের মৌলবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে অবস্থান নিতে হবে, এদের রুখতে হবে। কারণ এরা দেশটির স্থিতি এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।’
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক চরমপন্থী সংগঠনগুলোর ক্রমাগত হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেতে গিয়ে এমন কথাই বলেছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস।
গত ২০ নভেম্বর হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভের এই রেজ্যুলেশন বা সভা থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস।
কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ধারণা দেন এবং বাংলাদেশ যে সব সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাও তুলে ধরেন। সবশেষে এসব সমস্যার কিছু সমাধানে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাও উল্লেখ করেন।
সারাবাংলার পাঠকদের উদ্দেশে কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কসের বক্তব্য তুলে ধরা হলো :
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দেশটিতে ১৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস করেন। যার মধ্যে রয়েছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং নাস্তিক।
প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি। এতে অন্তত এক কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ধর্ষিত হন দুই লাখ নারী, যাদের মধ্যে অনেকেই জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বধীন ইসলামিক উগ্রপন্থীদের হাতে ধর্ষিত হন।
অন্যদিকে মিয়ানমারে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার আট লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীকে তারা স্বেচ্ছায় আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ একটি জটিল ভূমিকা পালন করছে।
চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
যেখানে এর আগের নির্বাচনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের হুমকির লক্ষ্য হিসেবে পরিণত হয়। ফলাফল হিসেবে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৪৯৫টি বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়, ৫৮৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করা হয় এবং ১৬৯টি মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টার ঐক্য পরিষদ এই পরিসংখ্যান জানিয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর চরমপন্থীরাই দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত। ধর্মীয় চরমপন্থীদের প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এমনকি আহমদীয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরাও।
একইসময়ে দেশটিতে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি চরমপন্থী দল এক ধরনের আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ থেকে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করা। আর দাবি আদায়ে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের বা জিহাদেরও পরিকল্পনা করেছে তারা।
জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম এবং এই ধরনের অন্যান্য ধর্মীয় চরমপন্থী দলগুলো বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের ওপর হুমকি অব্যাহত রেখেছে। সেইসঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও রয়েছেন সহিংসতার শিকার হওয়ার শঙ্কায়।
ন্যাটো জোটের সাবেক ল্যান্ড কমান্ড লিডার জেনারেল জন ডব্লিউ নিকোলসন বাংলাদেশে আল কায়েদার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি, জামায়াতে ইসলামি, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী দলের কারণে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ বা বাংলাদেশের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থকে নষ্ট করে দিয়েছে।
গত কিছুদিনে এমন বহু মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে যারা ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে জড়িত এবং যারা ইরাক ও সিরিয়ার মতো বাংলাদেশকেও ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বাংলাদেশের মানবাধিকারের সুরক্ষা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের সুরক্ষায় দেশটির সরকারের সঙ্গে আরো গভীরভাবে কাজ করা। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় চরমপন্থা মোকাবিলাও কাজ করা উচিত এবং সেটা এখন থেকেই।
হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ সমাধান হিসেবে বলছে, প্রথমত, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা এবং ধর্মনিরপেক্ষ যে গণতন্ত্র বাংলাদেশ খুঁজে পেয়েছিল তার কথা স্মরণ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবির এবং হেফাজতে ইসলামসহ এই ধরনের মৌলবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে অবস্থান নিতে হবে, এদের রুখতে হবে। কারণ এরা দেশটির স্থিতি এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
তৃতীয়ত, একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে সাড়া দিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
এবং চতুর্থত, মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বা স্টেট ডিপার্টমেন্টকে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন জামায়াতে ইসলাম, ছাত্র শিবির এবং হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যদি যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব বা আর্থিক লেনদেন থাকে তবে তা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে।
সারাবাংলা/এসএমএন