Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালেদা জিয়ার নির্বাচন নিয়ে যা বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল


২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৫

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) যদি খালাস পেয়ে যান তারপরও তাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’

মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

এর আগে বিচারিক আদালতে দুই বছরের বেশি সাজা হলে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায়ও কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিএনপির পাচঁ নেতার করা আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

‘চূড়ান্ত আপিলে খালাস না পেলে নির্বাচনের সুযোগ নেই খালেদা জিয়ার’

হাইকোর্টের আদেশের পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘গতকাল অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম এবং ওদুদ ভূইয়া, মশিউর রহমান, আব্দুল ওয়াহাব, আমানুল্লাহ আমান ও জাহিদ হোসেন কতগুলো দরখাস্ত করেছিলেন হাইকোর্টে, এই কথা বলে যে, তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিনে আছেন। তাদের দণ্ড যদি স্থগিত না করা হয় তাহলে তারা সামনে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এই কথা বলে তারা তাদের দণ্ড বা কনভিকশন স্থগিতের আবেদন করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি আদালতে বলেছিলাম, ফৌজদারি আদালত, বিশেষ করে ফৌজদারি আপিল আদালত তাদের সাজা (সেনটেনস) স্থগিত করতে পারেন। কিন্তু কনভিকশন করে তাকে যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সেটাকে স্থগিত করার কোনো সুযোগ নেই।’

আর বিশেষ করে আমি সংবিধানের ৬৬(২)-এর (ঘ) উল্লেখ করে বলেছিলাম, ‘এই সমস্ত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পরবেন না বা সংসদ সদস্য হিসেবেও থাকতে পারবেন না।’

বিজ্ঞাপন

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যদি তিনি নৈতিক স্থলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তি লাভের পরে ৫ বছর সময় অতিবাহিত না হয়। যেই ব্যক্তিরা দরখাস্ত করেছেন তারা সবাই দণ্ডিত। এরা তাদের দণ্ড থেকে এখনো মুক্তি লাভ করেননি এবং তাদের ৫ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি। এমতাবস্থায় যদি তাদের দণ্ড স্থগিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়—তবে তা হবে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।’

‘আমাদের এ বক্তব্যগুলো আদালত গ্রহণ করে তাদের দরখাস্তগুলো খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অবকাশ থাকবে না বলে আমি মনে করি।’—বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এ আদেশ প্রযোজ্য হবে কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিশ্চয়ই, এটা তো সাংবিধানিক বিধিবিধান। কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বা সাংসদ হিসেবে তিনি পার্লামেন্টে থাকতে পারবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তিলাভের পরে ৫ বছর অতিবাহিত না হয়।’

‘এখানে কন্ডিশন মূলত দুটি। তিনি যদি দণ্ডিত হন পারবেন না। ইতোমধ্যে তিনি যদি তার দণ্ড থেকে মুক্তিলাভ করেন বা তার সাজা যদি বাতিল হয়ে যায় সেই ক্ষেত্রে বাতিলের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি পারবেন না। মানে দুটো প্রতিবন্ধকতা তার আছে। এটা সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতা। কাজেই যেকোন আদালত তার রায় দিয়ে এই সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতাকে ওভারকাম করতে পারেন না, এটাকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না।’

বিজ্ঞাপন

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাইকোর্ট তার আদেশে কিন্তু বলে দিয়েছে এ বিষয়ে আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত স্যাটেল করে দিতে পারে। কিন্তু আপনি বলছেন দণ্ড স্থগিত করা হলে তা হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ সবই তো সংবিধানের দ্বারা এবং সংবিধানের তৈরি। সংবিধান দ্বারা চলতে হবে। ফলে আমার ব্যাখ্যা হলো, সংবিধানের বিধান কোনো আদালত অগ্রাহ্য করতে পারেন না।’

‘হাই কোর্ট আমাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। এখন তারা যদি আপিল করে, তবে আপিল বিভাগে আমরা একই বক্তব্য দেব।’

তাহলে কি আমরা ধরে নেব খালেদা জিয়া বা বিএনপির অন্যান্য যে নেতারা দণ্ডিত সেটা যদি আপিল বিভাগে স্থগিত করতে পারে তাহলে কি নির্বাচন করতে পারেব?

‘আপিল বিভাগ কি করবে আমি বলতে পারি না। কিন্তু আমার সাবমিশন হলো সংবিধানের ওপরে।’

মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মোফাজ্জল চৌধুরী মায়ার ১০ বছর করে দণ্ড হয়েছিল। কিন্তু তারা নির্বাচন করেছেন, মন্ত্রী হয়েছেন এবং বহাল থেকেছেন। আর এরশাদ কারাগার থেকে নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অ্যাটর্নি বলেন, ‘এরশাদের বিষয়ে তো আমাদের সুপ্রিম কোর্টেরই রায় আছে। তার যে পদ সেটা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। আর মহিউদ্দিন খান আলমগীর বা মায়া এদের ব্যাপারে সেই সময় এই সাবমিশনগুলো রাখা হয়েছিল কি না, এটা আমি বলতে পারব না।’

সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাখ্যায় এখন আমি যাবো না। আমার সামনে যে মামলাগুলো আছে এসব মামলায় আমার বক্তব্য হচ্ছে এটি।’

আদালত বা যেকোন প্রতিষ্ঠান কি সংবিধানকে অগ্রাহ্য করতে পারবে? এটা সংবিধানের বিধান। বিচারপতি মোস্তফা কামালের রায় অনুযায়ী নাকি এটা করা যায়?

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মোস্তফা কামালের রায়ের অনেক পরে জাস্টিস মামুনুল আমিন চৌধুরীর রায় দিয়েছেন এবং তার রায়ের প্রেক্ষিতে এরশাদ তার পদ হারিয়েছিলেন পার্লামেন্ট থেকে।’

আপনি বলছেন, দণ্ড স্থগিত হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কিছুদিন আগে হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছেন, তিনিও কি পারবেন না?

‘সেটা উনি যদি ফাইল করেন এবং ওইখানে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে প্রশ্ন তারা উত্থাপন করবে। এটা আমার বক্তব্য এবং এর আগে এভাবে কেন বলা হয়নি আমি জানি না।’— বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

নির্বাচনের ব্যপারে তো নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই, তাহলে কি উচ্চ আদালতের আদেশই মানতে হবে?

এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না না নির্বাচনের ব্যাপারে তো আমাদের সংবিধানেই বিধান রয়ে গেছে। কাজেই অন্য কোনো আইনে কি হলো না হলো সেটা বড় প্রশ্ন না।’

তাহলে বেগম জিয়া তো দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, তাহলে কি তাকে নির্বাচনের জন্য ২৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে?

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সংবিধান তো তাই বলে। আর উনি যদি খালাস পেয়ে যান তারপরও তাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’

সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর