নৌকাকে জয়ী করতে নওফেলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি নাছিরের
২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:২৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দলের মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছে মহানগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নগর ভবনে গিয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে চট্টগ্রাম-৯ (কোতয়ালী-বাকলিয়া) আসনে বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি এনেছেন নওফেল।
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে আ জ ম নাছির উদ্দিনের রাজনৈতিক দূরত্ব থাকলেও নৌকা মার্কার প্রার্থী মহিউদ্দিন পুত্র নওফেলকে আন্তরিকভাবেই বরণ করে নিয়েছেন মেয়র। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে মেয়রের সঙ্গে প্রায় আধাঘন্টা আলাপ করেছেন নওফেল। এসময় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলও ছিলেন। হাতে হাত ধরে বাদল ও নওফেলসহ চট্টগ্রাম মহানগরের সব আসনে নৌকার জয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেয়র।
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) সকালে নওফেল চট্টগ্রামে আসেন। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরী ও পিতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবর জেয়ারত করে নওফেল নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যান।
আরও পড়ুন: মহিউদ্দিন নেই, এবার টুঙ্গিপাড়ায় মেজবান আয়োজনে নওফেল
এরপর দুপুর ২টা ৪১ মিনিটের দিকে নওফেল যান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নগর ভবনের কার্যালয়ে। প্রায় একই সময়ে বাদলও পৌঁছান সেখানে। দুই নেতা মেয়রের অফিসকক্ষে গিয়ে মেয়রের চেয়ারের পাশে রাখা দুটি চেয়ারে বসেন। তবে মেয়র ওই কক্ষে ছিলেন না। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নিবাহী কর্মকর্তার কক্ষে। নওফেল বাদলের পায়ে ধরে সালাম করেন। এই পর্যায়ে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী এসে বাদলের কানে কানে কথা বলেন। এরপর বাদল ও নওফেল উঠে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে যান।
দুই নেতা প্রবেশের পর মেয়র চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাদের স্বাগত জানান। এসময় তাদের বুকে টেনে নেন মেয়র ও করমর্দন করেন। তাদের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুরও ছিলেন।
আলাপের সূত্রপাত ঘটিয়ে বাদল বলেন, ‘মেয়রকে দেখতে আসছি। একজন বললেন আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। আমি বললাম- লঙ্ঘন কেন হবে? উনি তো চট্টগ্রামের মেয়র।’ তখন মেয়র বলেন, ‘আপনারা তো এখনও মনোনয়ন পত্র জমা দেননি, আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে না। এটা তো সৌজন্য সাক্ষাত।’
মেয়র বাদলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার মার্কা তো নৌকা।’। নওফেল বললেন, ‘হ্যাঁ, এখন উনি (বাদল) সরাসরি নৌকার প্রার্থী।’
মেয়র বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) সকালে জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসায় আসেন। সেখান থেকে সকাল ১১টায় আপনাদের নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাব।’
বোয়ালখালী-চান্দগাঁও, কোতোয়ালী-বাকলিয়া, ডবলমুরিং-হালিশহর, বন্দর-পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড-পাহাড়তলী এবং হাটহাজারী-পাহাড়তলী আসনের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাবার কথা বলেন মেয়র।
নওফেল জানতে চান, ডবলমুরিং-হালিশহর আসনের প্রার্থী ডা.আফসারুল আমিন এবং বন্দর-পতেঙ্গা আসনের এম এ লতিফের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না ? জবাবে মেয়র তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান।
এই পর্যায়ে নওফেল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম-৯ আসনে এবারের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলেন। মেয়র বলেন, ইভিএম নিয়ে আমার কোন আইডিয়া নেই।
বাদল বলেন, ‘জনগণকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। একটা ভোট দিতে ২০ সেকেন্ড সময় লাগে।’ নওফেল বলেন- ‘এটা নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরাই চেয়েছিলাম। চট্টগ্রাম-৯ আসনে জিততে হবে। প্রমাণ করতে হবে ইভিএম আমলে আমরা জিতেছি। কুমিল্লায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হয়েছিল, আমরা হেরেছিলাম।’
মেয়র বলেন- ‘কুমিল্লা আর চট্টগ্রাম এক না। চট্টগ্রাম-৯ আসনে আমরা অবশ্যই জিতবো।’ বাদল বলেন, ‘অবশ্যই জিতবো। এবারের নির্বাচন অনেক স্মুথ হবে।’
নওফেল রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির প্রসঙ্গ তুললে মেয়র বলেন, ‘আমি ওয়াসার চেয়ারম্যানকে বলেছি ৩০ নভেম্বরের পর যেন আর রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি না করে। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ নাকি শুরু হয়েছে। এখন উনাকে (সিডিএ চেয়ারম্যান) কে বোঝাবে ?’
মেয়র ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদারকে ডেকে নেন। তিনি ইভিএম সম্পর্কে ধারণা দেন।
মেয়র বাদলের কাছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান আয়োজনের আবদার করেন। তখন হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে।’ বাদল নির্বাচনের আগেই মেজবানের আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন। মেয়র বাদলকে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান।
বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে বাদল ও নওফেল মেয়রের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন।
এসময় মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন, আমি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। উনি (নওফেল) তো ঢাকায় থাকেন। চট্টগ্রামে আসার পর নির্বাচন নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিলেন।’
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। চট্টগ্রামের সব আসনে আমরা জিতব, আমাদের সৎ সাহস আছে। আমি সেক্রেটারি সাহেবের (আ জ ম নাছির উদ্দিন) সঙ্গে দেখা করেছি। নেতাকর্মীরা অনেক উজ্জীবীত। চট্টগ্রাম-৯ আসন নেত্রীকে উপহার দেব।’
মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, এবার দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা হচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং আরেকটি নতুন প্রজন্মের হাতে আগামী দিনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া। দুশ্চরিত্ররা যদি চক্রান্ত না করে তাহলে অবশ্যই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে।
বাদল ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে দুই দফায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন। এবার তিনি তৃতীয়বারের মতো ওই আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টানা ১৭ বছরের মেয়র মহিউদ্দিনের ছেলে নওফেল এবার প্রথম ভোটের মাঠে এসেছেন। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৯ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন বর্তমান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। ২০১৪ সালে আসনটি মহাজোটকে ছেড়ে দেওয়া হয়। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার আসনটি ফিরিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চট্টগ্রাম মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল