‘এনবিআরকে সিদ্ধান্ত ও নীতি বাস্তবায়নের দুর্বলতা কমাতে হবে’
২৭ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৩৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বড় ধরনের সংস্কারে কর অব্যাহতি কমানোসহ বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত ও নীতি বাস্তবায়নেও সংস্থাটিকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কর অব্যাহতি কমানো দরকার। অথবা কোন বিষয়ে কর ছাড় হবে, তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। একইসঙ্গে ট্যারিফ মূল্যকে বিদায় করা দরকার অথবা এটা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা দরকার। সিদ্ধান্ত ও নীতি বাস্তবায়নে যে দুর্বলতা আছে, তাও কমাতে হবে।’
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে সাংবাদিক আবু কাওসারের লেখা ‘রাজস্ব ভাবনা যেতে হবে বহুদূর’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বইটিতে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তর তথ্য উঠে এসেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কয়েকজন সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজস্ব সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার বইটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সাংবাদিক ও লেখক কাওসারকে অভিনন্দন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বইটি প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে তিনি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন। কারণ বাংলা ভাষায় রাজস্ব নিয়ে এমন বই আর নেই। বইটিতে যেসব বিষয় নিয়ে পরামর্শ এসেছে, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে তা পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এনবিআর শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে পারে। প্রতিবছর কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের দিয়ে সার্ভে করাতে পারে। তারা ফিরে এসে যে রিপোর্ট দেবে, যাদের করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলবে, এনবিআর তাদের করের আওতায় নিয়ে আসবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংবাদিক আবু কাওসার নিজের প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, অর্থনীতির মতো নিরস শাস্ত্র নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাকে। বইটিতে কর ফাঁকির বিষয়ে তথ্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বছরে এখনও কর ফাঁকির পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা। দেশে করযোগ্য অনেক রাজস্ব আছে, কিন্তু আদায় করা যাচ্ছে না।’
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও করের একক হার হওয়া উচিত। পরে যদি কারও ওপর থেকে কর হার কমাতে হয় বা কাউকে কর অবকাশ দিতে হয়, সেটা করতে হবে। একেক বছর একেক ধরনের কর হার হওয়া উচিত নয়। কারণ বিনিয়োগের সিদ্ধান্তও এর ওপর নির্ভর করে। কর আদায়ে কঠোর হলেই বেশি কর আদায় সম্ভব নয়। করদাতাদের সহযোগিতা ছাড়া কর আদায় বাড়ে না।
সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব নয়। এনবিআরকে আলাদা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান করে দিতে হবে। আর এনবিআরের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা না থাকলে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে না।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, বাংলাদেশের বহু দূর যাওয়ার পথে রাজস্ব খাতের সংস্কার খুবই জরুরি। লেখক ১৩ জন বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নিয়ে বইটি প্রকাশ করেছেন। এ খাত নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের জন্য এ বইটি আরও ভাবনার খোড়াক জোগাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব বোর্ডই হতে হবে, কোনো সরকারি অফিস নয়। এখানকার চেয়ারম্যান হতে হবে এনবিআরের কর্মকর্তা থেকেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের নামে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারা এটি পরিচালিত হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, মান্ধাতা আমলের মতো ভবন ভাড়া নিয়ে কর আদায় করা যাবে না। অঞ্চলভিত্তিক নিজস্ব ভবন গড়ে তুলতে হবে।
এনবিআর সদস্য (আয়কর) জিয়া উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানসহ এনবিআরের একাধিক সাবেক কর্মকর্তা ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর