Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মনোনয়ন পেলেও ‘মন’ পেলেন না তারা


২৮ নভেম্বর ২০১৮ ২২:০৭

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া ২০ দলীয় জোট, মহাজোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টের শরিক দলের প্রার্থীদের কেউ কেউ নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় লাঞ্ছিত ও অবাঞ্চিত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিএনপি করেন না, কিন্তু জোট শরিক হিসেবে ধানের শীষ পেয়েছেন; আওয়ামী লীগ করেন না, অথচ শরিকদল হিসেবে নৌকা পেয়েছেন; কিংবা জাতীয় পার্টি (জাপা) করলেও নিজ এলাকায় মনোনয়ন না পেয়ে অন্য এলাকায় পেয়েছেন— এমন প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় রোষের মুখে পড়েছেন। অর্থাৎ দল বা জোটের কাছ থেকে মনোনয়ন পেলেও নিজ এলাকায় কর্মী-সমর্থক-ভোটারদের ‘মন’ পাচ্ছেন না তারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বুধবার (২৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় সিলেটে বিভাগীয় রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী আক্রমণের শিকার হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ুম গ্রুপ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে শমসের মবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বের হওয়ার সময় তার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ সময় কয়েকজন মশসের মবিন চৌধুরীর গাড়িতে লাথিও মারেন। কেউ কেউ তাকে ‘মীর জাফর’ বলে গালিও দেন।

বিএনপির কূটনীতিক কোরের সাবেক এই গুরুত্বপূর্ণ নেতা দলটির সর্বশেষ কাউন্সিলে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু বছর দুই আগে বিএনপি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসেবে এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিকল্পধারা। সেই হিসেবে সিলেট-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন শমসের মবিন চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-জিয়ানগর) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বুধবার (২৮ নভেম্বর) স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন তিনি। তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় পিরোজপুর-২ আসনে।

জানা গেছে, এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া আরেক প্রার্থী সোহেল মঞ্জুর সুমনের পক্ষে কাজ করছে ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-জিয়ানগর উপজেলা বিএনপির একটি অংশ। তারা কিছুতেই বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। তাদের বাধার মুখে উপজেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি ডা. ইরান। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় ডিসি অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।

ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে ভাণ্ডারিয়া, কাউখালী, জিয়ানগর উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের প্রার্থী সোহেল সুমন। আমরা তার জন্যই কাজ করব।’

এদিকে, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান টেলিফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেনের এ বক্তব্য ঠিক নয়। তার সভাপতি সোহেল মঞ্জুর সুমন বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বিধায় আমার বিরুদ্ধে তিনি অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাছাড়া সোহেল মঞ্জুর সুমন নিজেই স্থানীয়দের চাপের মুখে পড়েছেন। তিনিও ডিসি অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।’

ইরান বলেন, অধ্যাপক রফিকুল কবীর লাবু মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীরা সোহেল মঞ্জুর সুমনকে এলাকায় যেতে দিচ্ছেন না। আর সোহেল মঞ্জুর সুমন ‘অতিথি পাখি’র মতো এলাকায় এসেছেন। তাকেও এলাকাবাসী মেনে নেয়নি।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন বাবলুকে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের জিয়াউদ্দীন বাবলুকে সৈয়দপুর-কিশোরঞ্জের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী সমর্থকরা মেনে নিতে পারছেন না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছে স্থানীয় জাতীয় পার্টি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ না করেও যারা নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন অথবা বিএনপি না করেও যারা ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের জন্য নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা বা নির্বাচনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কঠিন হবে। কারণ, প্রধান দুইটি দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা বিষয়টি এত সহজে মেনে নেবে না। সে কারণে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় যাওয়ার আগে জোটের শরিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের উচিত কেন্দ্রীয়ভাবে বসে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে একটা সেতুববন্ধন তৈরি করে নেওয়া। হুট করে নিজ এলাকায় গেলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লক্ষ্ণীপুর-১ আসনে ধানের শীষ মনোনীত বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রার্থী সাহদাত হোসেন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করব। তারপর তাদের সঙ্গে নিয়েই এলাকায় যাব। কারণ, আমরা মূল শক্তি হচ্ছেন তারা। তাদেরকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করার চিন্তা আমার নেই।’

আরও পড়ুন-

সারাদেশে ৩ হাজার ৫৬টি মনোনয়নপত্র জমা

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় পার্টি বিএনপি সংসদ নির্বাচন ২০১৮

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর