Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন ঘিরে খেলাপি ঋণ থেকে মুক্ত হতে আবেদনের লম্বা লাইন


২৮ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:১০

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: চলতি নভেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে পড়েছে ঋণখেলাপিদের লম্বা লাইন। এই একমাসেই ১৭০টি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন এসে জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংক সুস্পষ্ট করে না বললেও ইঙ্গিত দিয়েছে, পুনঃতফসিলের আবেদন নিয়ে হাজির হওয়া ঋণখেলাপিদের বড় একটি অংশই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী হতে চান। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, ঋণখেলাপির তকমা থাকলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব হবে না বলেই তারা শেষ মুহূর্তে এসে তড়িঘড়ি করে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে প্রার্থিতার যোগ্যতা নিশ্চিত করতে চান।

বিজ্ঞাপন

সাধারণত কোনো ঋণ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করা হলে ওই ঋণকে খেলাপি ঋণ হিসেবে ঘোষণা করে ব্যাংক। পরে ঋণ নেওয়া ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে ‘ঋণখেলাপি’ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ঋণখেলাপি কোনো ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। অন্যদিকে, কারও একটাকা ঋণ থাকলেও এবার সেই তথ্য ব্যাংকগুলোকে পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে যেকোনো পরিমাণের খেলাপি ঋণের কারণেই এবার জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা আটকে যেতে পারে।

তবে নির্দিষ্ট ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি সনদ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সিআইবি সনদ পেলে আগের ঋণখেলাপিরাও অংশ নিতে পারবেন নির্বাচনে। সে কারণে নির্বাচন এলেই ব্যাংকগুলোতে ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক পড়ে যায় বলে জানান অর্থনীতিবিদরা। ব্যতিক্রম হয়নি এ বছরও। এই নভেম্বর মাসেই ১৭০টি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন এসে জড়ো হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নভেম্বর মাসে ১৭০টি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে সবই যে নির্বাচন সংক্রান্ত, তা বলা যাবে না। তবে অধিকাংশই নির্বাচন সংক্রান্ত।’

পুনঃতফসিলের আবেদনকারীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই কি না— জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুনঃতফসিলের আবেদনে তো আর প্রার্থীর পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। তার খেলাপি ঋণটি নিয়মিত করা প্রয়োজন। তা না হলে তো সে প্রার্থী হতে পারবে না। সেজন্য আমরা ধারণা করতে পারি, নির্বাচনের ঠিক আগে আগে যে আবেদনগুলো এসেছে, এগুলো নির্বাচন সংক্রান্তই হবে। হয়তো প্রার্থীরাই আবেদন করেছেন। তা না হলে সারাবছর তো কেউ ব্যাংকে ঋণ পুনঃতফসিল করতে আসে না।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখেই সাধারণত খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়ে থাকে। যারা প্রার্থী নয়, তারাও এই সময়টিতে সুযোগ নেয়। তবে ব্যাংকে ভিড় থাকে মূলত প্রার্থীদেরই।’

ঋণখেলাপি ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে এবার নতুন একটি বিধান হয়েছে। এর আগে, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়ের সাত দিন আগে সিবিএ সনদ নিতে হতো। কিন্তু এবার মনোনয়নপত্র দাখিলের আগ পর্যন্ত পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখার সমালোচনা করে ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘এর ফলে যারা মনোনয়ন পাওয়ার আশায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের চেষ্টা করছিল, তারা মনোনয়ন না পেলে আর খেলাপি ঋণ পরিশোধ করবেন না।’ ফলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে এবার খেলাপি ঋণ থেকে অর্থ আদায়ের পরিমাণ কমতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে, পুনঃতফসিলের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ থেকে অর্থ আদায়ের পরিমাণ জানাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্তত ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও খেলাপি ঋণ থেকে তাদের অর্থ আদায়ের পরিমাণ জানা যায়নি। তবে কয়েকটি ব্যাংক তাদের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে রূপালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রত্যাশা করছে। ইসলামী ব্যাংক বলছে, আঞ্চলিক অফিসগুলো থেকে এখনও তথ্য আসেনি। বুধবার মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন থাকায় পরবর্তীতে তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি। ওয়ান ব্যাংকও একই ধরনের তথ্য জানিয়েছে।

চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। আর খেলাপি ঋণের ৪৩ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই এ তথ্য জানিয়েছিলেন।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৪৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৮৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে এর পরিমাণ দাঁড়ায় তিন গুণে। ব্যাংকাররা বলছেন, গ্রাহক ও ব্যাংক— উভয়ের স্বার্থেই ঋণ পুনঃতফসিল করতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে চাপের মুখে প্রভাবশালী গ্রাহকদের পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে ব্যাংক। এমনকি একই গ্রাহকের কোনো কোনো ঋণ ১০ বারও পুনঃতফসিল করতে হয়েছে। এরপরও এসব গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকের টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।

শুক্র ও শনিবার খোলা থাকবে সিআইবি সেল

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর মনোনয়নপত্র দাখিলকারী প্রার্থীদের ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে হবে। তথ্যের সঠিকতা ও হালনাগাদ তথ্য যাচাইয়ের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত ব্যাংকের সিআইবি সেল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন আগামী ২ ডিসেম্বর ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত তথ্যসহ শাখা ব্যবস্থাপকদের সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের দফতরে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সব ব্যাংকের সিআইবি সেল খোলা রাখতে হবে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

ঋণখেলাপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খেলাপি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর