মাঠজুড়ে সোনালি ফসল, কৃষকের মুখে হাসি
৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৪৭
।। মাহিদুল ইসলাম রিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
দিনাজপুর: বৃষ্টি কম হওয়ায় এ মৌসুমে আমন চাষে জমিতে সেচ দিতে কৃষককে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা। সঙ্গে ছিল কয়েক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম। কিন্তু মাঠ জুড়ে সোনালি ফসল ভুলিয়ে দিয়েছে পেছনের সব ক্লান্তি আর খরচের হিসাব। ঘরে ফসল ওঠার মৌসুমের শুরুতে তাই আনন্দে মাঠের ধান গোলায় ভরছেন তারা।
সারাদেশর মতো মাঠজুড়ে সোনালি ফসল কাটা-মাড়াইয়ের মহা উৎসবে কর্মব্যস্ত দেশের উত্তরের জেলা ও খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের আমন চাষিরাও।
দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মহবতপুর গ্রামের আকবর আলী সারাবাংলাকে জানান, এই মৌসুমে আমন চাষে খুবই কষ্ট করতে হয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে সেচ দিতে হয়েছে কৃত্রিম পদ্ধতিতে। যে কারণে চাষাবাদে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। এছাড়া জমিতে দিনমজুরের খরচ বেড়েছে। আগে তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকায় একজন শ্রমিক পাওয়া যেত। এখন সেই মজুরি বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার থেকে পাঁচশ টাকা।
একই গ্রামের আমন চাষি সাজু মিয়া জানান, কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এবছর ধানের দাম বেশি পাওয়ার আশাও করছেন এই কৃষক।
পুরো এলাকাজুড়ে ব্যস্ততা
শুধু কৃষকই নয়, ব্যস্ততা আর আনন্দে সময় পার করছেন দিনাজপুরের কৃষিশ্রমিকরাও। দীর্ঘসময় কাজ না থাকা এসব নিম্ন আয়ের পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই এখন ব্যস্ত ধান কাটা-মাড়াইয়ে।
স্থানীয় কৃষিশ্রমিক সাবিনা জানান, স্বামীর সঙ্গে তিনি মাঠে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন। এতে সংসারে বাড়তি উপার্জন হচ্ছে। নতুন ধানের গন্ধ আর পুরো এলাকাজুড়ে এই সময়ের ব্যস্ততা তিনি উপভোগ করেন বলেও জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. তৌহিদুল ইকবাল সারাবাংলাকে জানান, চলতি মৌসুমে আমন ধানের ভালো ফলনের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। কৃষক ফসল ঘরে তোলার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সঙ্গেই থাকবেন।
এবার বৃষ্টি তেমন না হলেও ফলন হয়েছে বাম্পার। যেভাবে ফসল দেখা দিয়েছে, তাতে এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত ৮২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত ৮২ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ করেন কৃষকরা।
এবারে জেলার মোট ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। এর মধ্যে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধানে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি, ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে। হাইব্রিড জাতের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ৮ হাজার ৩০৭ হেক্টর জমিতে। আবাদ বেড়েছে এই ক্ষেত্রেও, চাষ হয় ৮ হাজার ৩৭৯ হেক্টর জমিতে। এছাড়া স্থানীয় জাতের ধান আবাদে ৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৩৬ হেক্টর জমিতে।
এ মৌসুমে আমন চাষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৭ লাখ ১৭ হাজার একশ মেট্রিক টন ধান। এর মধ্যে উপশী জাতের ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৬ মেট্রিক টন। হাইব্রিড জাতের ২৮ হাজার ৬৫৯ মেট্রিক টন ও স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এমএইচ