Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রাম্পের সঙ্গে তার সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক কেমন?


৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৫৮

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কখনও কখনও সামরিক কমান্ডারদের অপমানও করেছেন তিনি। কিন্তু তবুও সামরিক বাহিনীর অনেকেই তার একনিষ্ঠ ভক্ত। কেন?

জানা যায়, থ্যাংকস গিভিংয়ের দিন ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মোতায়েনরত মার্কিন সেনাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তিনি বলেন, আপনারা সত্যিই আমাদের হিরো।

এখানেই অবশ্য শেষ নয়। ট্রাম্প সেনাদের আরও কিছু কথা বলেন, যেগুলো সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একজন প্রেসিডেন্টের সংলাপ হিসেবে ঠিক মানানসই নয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভালো আছে। পুরো বিশ্বের চেয়ে এগিয়ে আছে।

ট্রাম্পের এ ধরনের কথাবার্তাকে রাজনৈতিক বলে অভিহিত করছেন সমালোচকরা। তারা আরও বলছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তার সামরিক বাহিনীর কাছে নিজের অর্জন নিয়ে বাড়িয়ে বলতে পছন্দ করেন। তিনি তাদের জন্য কী করেছেন, তা দেখিয়ে বেড়াতে পিছুপা হন না। যেমন এই থ্যাংকস গিভিংয়েই ট্রাম্প বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর জন্য যতটা করেছেন, তা এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট করেননি।

সেনাদের সঙ্গে খুবই অল্প সময়ই কাটিয়েছেন ট্রাম্প

তবে এসব বাগাড়ম্বর বাদ দিলে এটা স্পষ্ট, বাইরের দেশে মোতায়েনরত সেনাদের সঙ্গে খুবই অল্প সময়ই কাটিয়েছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি ফক্স নিউজ সানডে’তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য তিনি বলেন, বাইরে মোতায়েনরত সেনাদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। শিগগিরই এ উপলক্ষে সফরও করবেন তিনি। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি যদি ইরাক বা আফগানিস্তান সফরে যান, তাহলে সামরিক বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে এটাই হবে দেশগুলোতে তার প্রথম সফর।

বিজ্ঞাপন

তবে এবারের ভেটারান্স ডে’তে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কবরস্থান আর্লিংটন সেমিটারি পরিদর্শনেই যাননি ট্রাম্প। ফ্রান্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের দাফন করা হয়েছে— এমন একটি কবরস্থান পরিদর্শনের সুযোগ থাকলেও সেটা এড়িয়ে গেছেন। তার এমন আরও অনেক কর্মকাণ্ডই রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে ছোটই করেছেন তিনি।

এর আগে, ওসামা বিন লাদেনকে আটকের অভিযান পরিচালনাকারী এক মার্কিন কমান্ডার গণমাধ্যমের ওপর ট্রাম্পের আক্রমণকে ‘মার্কিন গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেন। এর জবাবে ট্রাম্প ওই কমান্ডারকে ‘হিলারি ক্লিনটনের সমর্থক’ বলে দাবি করেন।

আবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় ভিয়েতনামে যুদ্ধবন্দি জন ম্যাককেইনকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন, আমি এমন মানুষ পছন্দ করি যারা কখনও ধরা পড়েনি। এমন একজন সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে ট্রাম্পের এই বক্তব্য তার সংবেদনশীলতার চূড়ান্ত অভাব বলেও সমালোচনা করেন অনেকে।

ট্রাম্প উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছেন

সামরিক বাহিনীকে নিজের খেয়াল খুশি মতো ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসী ‘অনুপ্রবেশ’ ঠেকাতে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেন। তার এই পদক্ষেপকে রিপাবলিকানদের ‘ক্ষমতা দেখানো’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন অনেক সমালোচক।

তারা বলছেন, ট্রাম্প উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। ২০১৭ সালের ভেটেরান্স ডে’তে সামরিক বাহিনীর জন্য একটি বিশাল কুচকাওয়াজের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে চমকে দেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল পল ইটন বলেন, প্রেসিডেন্ট এমন একটি প্রদর্শনী চাইছিলেন, যেখানে সামরিক শক্তি তাকে স্যালুট করছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে খরচের প্রসঙ্গ টেনে তিনি ওই পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। সেই কুচকাওয়াজ আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

বিজ্ঞাপন

তালিকাভুক্ত সেনাদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা

মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ‘চমকে দেওয়া’র মতো এমন আরও অনেক ঘোষণাই দিয়েছেন ট্রাম্প। যেমন— ইউএস স্পেস ফোর্স বা মার্কিন মহাকাশ বাহিনী নামে সামরিক বাহিনীর একটি অতিরিক্ত শাখা গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কোরীয় উপদ্বীপে সামরিক অনুশীলন বাতিলের ঘোষণাও ছিল চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এসব উদাহরণ মাথায় রেখে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সাবেক বাজেট কর্মকর্তা গর্ডন অ্যাডামস মনে করছেন, ট্রাম্প সেনাবাহিনীকে নিজের খেলনার মতো ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।

মিলিটারি টাইমস অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ট্রাম্পবিরোধী সেনাসদস্য ছিল ৩৭ শতাংশ। দুই বছর পর সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৩ শতাংশ। কিন্তু এসব হচ্ছে বোর কর্তাদের মধ্যে পদমর্যাদা আর ফাইলের হিসাবে। আদতে তালিকাভুক্ত সেনাদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার রেটিং ৪৭ শতাংশ।

অ্যাডামস বলেন, সেনারা এটা পছন্দ করে যে ট্রাম্প তাদের কাজের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। ট্রাম্প জুলাইয়ে জানান, পরবর্তী বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাবে সামরিক বাহিনী। কিন্তু সামরিক বাহিনীতে কাজ করা বাজেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবলই কথার কথা।

তথ্য যাচাইকারীরা দেখিয়েছেন, ২০১৯ অর্থবছরের জন্য ট্রাম্প জন এস ম্যাককেইন ন্যাশনাল সিকিউরিটি অথরাইজেশন অ্যাক্টে সই করেছেন। এর আওতায় সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ২০১১ সালে সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ ছিল ৭২ লাখ ৬০০ কোটি ডলার। এর কোনোটিই ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ নয়। মার্কিন ইতিহাসে সামরিক বাহিনী সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছিল ১৯৪৫ সালে, বর্তমান সময়ের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সেই পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৫ হাজার কোটি ডলার।

কিন্তু তালিকাভুক্ত সেনারা তবুও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই ভালোবাসে, তা বাজেট যেমনই হোক না কেন।

মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের একটি ইউনিটের সাবেক কমান্ডার জ্যাসন আমেরিন বলেন, তারা প্রেসিডেন্টের সব ভুল পদক্ষেপ মাফ করে দেয়। স্বাভাবিক সময়ে যেসব ভুলে তাদের রেগে যাওয়ার কথা ছিল, সেসব ভুলও তারা আমলেই নেয় না।

জ্যাসন বলেন, অবস্থা বিবেচনায় মনে হচ্ছে, হেন কোনো সীমা নেই যেটা প্রেসিডেন্ট অতিক্রম করতে পারবেন না, আর তারা ক্ষমা করে দেবে না।  আমার মনে হয় এটা কোনো খেলার দলের মতো মানসিকতা— আমার দল জিতবেই। এ অবস্থায় আপনি যখন নিজের দলের মধ্যে কোনো ভুল দেখবেন, সেটা এড়িয়ে যাবেন।

ওয়াশিংটনের আওয়াজে মনোযোগ দেওয়ার কিছু নেই

জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও আমেরিকান স্পেক্টাটরের লেখক ফ্রান্সিস বাকলি বলেন, সামরিক বাহিনীর মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন আসে মূলত কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে তার অবস্থান ও তার রক্ষণশীলতা থেকে।

তিনি বলেন, ট্রাম্প সামরিক বাহিনীকে গড়ে তুলেছেন। তাদের সামলে রাখছেন, সহজে পিছু হটবেন না। ট্রাম্প এমনভাবে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেন, যেমনভাবে ওবামা কখনোই করেননি। চলতি বছর সিরিয়ার বাশার আল আসাদের রাসায়নিক গুদামে মার্কিন হামলার ঘটনা এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিংবা গত বছরে সিরীয় ঘাঁটিতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথাও এটাই প্রমাণ করে।

বাকলি বলেন, এছাড়া প্রেসিডেন্ট ও পদমর্যাদার দিক দিয়ে যারা সামরিক বাহিনীর ওপরের স্তরে আছেন, বিশ্বের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় একইরকম।

তিনি বলেন, এরা হচ্ছে তেমন মানুষ যারা সামরিক বাহিনীতে ঢুকেছে দেশপ্রেমের জন্য। আর প্রেসিডেন্ট তাদের জন্য এমন সব লড়াই বেছে নেন, যেগুলো তাদের কাছে টানে।

তবে দিনশেষে ট্রাম্প সামরিক বাহিনীর মধ্যে জনপ্রিয় হোক বা না হোক, তার গুরুত্ব নেই। তিনি কমান্ডার-ইন-চিফ। যা নির্দেশ দেবেন, সামরিক বাহিনী তাই মানবে।

দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও জিমি কার্টারের আমলের সাবেক সেনাসদস্য জেমস ক্যারাফানো বলেন, সামরিক বাহিনীতে থাকা বেশিরভাগ মানুষই কেবল তার কাজ করে যায়। ওয়াশিংটনের আওয়াজে অত মনোযোগ দেওয়ার কিছু নেই।

(বিবিসি অবলম্বনে)

সারাবাংলা/আরএ/টিআর

ট্রাম্প ও সামরিক বাহিনী ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সামরিক বাহিনী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর