‘আইওটি বাস্তবায়ন করা গেলে স্মার্ট যুগে প্রবেশ সম্ভব’
৩০ নভেম্বর ২০১৮ ২১:০২
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) বাস্তবায়ন করা গেলে স্মার্ট যুগে প্রবেশ সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনের (আইবিএম) কর্মকর্তা ড. মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কাজসহ ব্যাংক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তথ্যের সুরক্ষা আইওটি’র মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব।
শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে ‘প্রেজেন্টেশন ক্লাবের আয়োজনে ক্লাবটির প্রধান কার্যালয়ে ‘সাইবার সিকিউরিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে ড. মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন।
প্রেজেন্টেশন ক্লাবের সভাপতি রাইসুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, আইওটি বর্তমান সময়ের আলোচিত ও উন্নত বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত একটি বিষয়। আইওটি হলো মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইসকে সংযুক্ত করা, যা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, আইওটি’র বাস্তব উদাহরণ হিসেবে স্মার্ট ফ্রিজের কথা বলা যেতে পারে। আইওটি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা গেলে স্মার্ট ফ্রিজ হবে এমন একটি যন্ত্র যা নিজ থেকেই ভেতরে প্রয়োজনীয় খাদ্য আছে কি না— তা শনাক্ত করা যাবে। এক্ষেত্রে ফ্রিজের ভেতরে স্থাপন করা ক্যামেরা ভেতরের অবস্থার বিবরণ গ্রাহককে টেক্সটের মাধ্যমে জানাবে।
সাইবার বিশেষজ্ঞ ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, আইওটির মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তথ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা যেতে পারে। যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ও অ্যাপ্লিকেশন সুরক্ষিত থাকবে। এছাড়াও এর মাধ্যমে বাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে, যেন বাড়িতে চোর ঢুকতে না পারে।
তবে আইওটি’র নেতিবাচক দিকের ব্যাখ্যা দিয়ে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, আপনার সব তথ্য ওয়েবসাইটে থাকছে। আপনার দৈনন্দিন কাজে বা ফিটনেস ট্র্যাকার ডিভাইসে জিপিএস ট্র্যাকার থাকলে হ্যাকাররা আপনার অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে। এর মাধ্যমে হ্যাকাররা আইডি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে অন্যান্যা ডিভাইসও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে। কারণ আইওটি নেটওয়ার্কে ডিভাইসগুলো চেইনের মতো কাজ করে।
সাইবার হামলা নিয়ে সচেতনতার প্রসঙ্গ উল্লখে করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে ‘মিরাই বটনেট’ অ্যাটাক হয়েছিল। ওই সাইবার হামলায় হ্যাকারদের একটা দল বিশ্বের বেশকিছু দেশে বিপুলসংখ্যক ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরকম হতে পারে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও। আপনি যখন ওয়াইফাই নিচ্ছেন, তখন সব তথ্য দিতে হবে। সেই তথ্য পরিবর্তন না করলে তা হ্যাকারদের হাতে চলে যাচ্ছে। হ্যাকারদের হাতে সম্বপূর্ণ তথ্য থাকায় তারা পুরো ওয়েবসাইটকে জব্দ করতে পারে।
ওয়াইফাই, ফেসবুক, গুগুল, ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সাইট বা অ্যাকাউন্টে শুরুতে দেওয়া পাসওয়ার্ড ও ইউজার আইডির নাম-পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েবসাইটে ঢুকে হোক অথবা ডিভাইস থেকে এগুলো পরিবর্তন করে নিলে বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম অর্ধেক কমিয়ে আনা যেতে পারে বলেও মত দেন এই সাইবার বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কোনো ওয়েবসাইটের একটি অ্যাকাউন্টও যদি কোনো হ্যাকার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে, তবে পুরো ওয়েবসাইট ঝুঁকিতে থাকে। কারণ আপনার যোগাযোগ, ফটো, ভিডিও, অবস্থান, স্বাস্থ্য ও আর্থিক তথ্যের মতো বিষয়গুলো তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেজেন্টেশন ক্লাবের সহসভাপতি মোনাসিব রোমেলসহ অন্যান্যরা। এসময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির প্রচার সহযোগী ছিল লক্ষ্য নিউজ প্রেজেন্টেশন একাডেমি।
সারাবাংলা/এসও/টিআর