‘ছুটির দিনে আদালতে যাওয়া জরুরি ছিল’
১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৪৬
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দণ্ডিতের সাজা স্থগিত হলে নির্বাচনে যেতে পারবেন- হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে যাওয়া জরুরি ছিল বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর যে কারণে ছুটির দিনেও আদালতে যাওয়াও জরুরি ছিল বলে জানান তিনি।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে এ ব্যাপারটা সর্বোচ্চ আদালতের গোচরে নেওয়া ও নিষ্পত্তি করা তার দায়িত্ব বলেও তিনি জানান। শনিবার (১ ডিসেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
ছুটির দিনেও তড়িঘড়ি করে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালত বসিয়েছে- বিএনপির আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের এমন বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তাদের (বিএনপির আইনজীবী) মুখে এসব কথা শোভা পায়না। তার কারণ বিচারপতি খায়রুল হক যখন পঞ্চম সংশোধনীর রায় দিয়েছিলেন। তারা তখন বিচারপতির বাসায় গিয়ে রাত দু’টায় স্থগিতের আদেশ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবারের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে যাওয়ার কারণ হলো এখানে দুই রকম রায় হয়ে যাচ্ছে। দু’টি ডিভিশন বেঞ্চ আদেশ দিয়েছেন দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সেই আদেশ আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। অথচ অন্যদিকে একটি একক বেঞ্চে বসে একজন বিচারপতি ভিন্নতর রায় দেন তাহলে তো দুই রকম রায় হয়ে যায়। এ বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি ছিল বলে আপিল করা হয়েছে।
তাহলে তো আপনারা রোববার যেতে পারতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোববার নমিনেশন পেপার (স্কুটিনি) যাচাই-বাছায়ের তারিখ। এটা স্কুটিনি যদি হয়ে যায় তখন তো এ আদেশের আর কিছু করার থাকবে না। সেজন্য আজকে গিয়ে স্থগিতাদেশ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল বলেই আমরা গিয়েছি। আমরা যে যাব এজন্য গতকালই ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোনে তাদেরকে (বিএনপির আইনজীবীদের) আমি জানিয়েছি। তারা সকলে উপস্থিতও ছিলেন।
দণ্ডিত হলেই নির্বাচন করতে পারবেন না
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোন দণ্ডিত ব্যক্তির যদি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে অন্তত দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হন তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। যে আদালতেই দণ্ড হোক। কোন ব্যক্তি দণ্ডিত হলেই নির্বাচন করতে পারবেন না। সোজা কথা।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমাদের আবেদনটি চেম্বার আদালত হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত করেছেন। আগামীকাল সকালে এটা শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আসার নির্দেশ দেন। এ আদেশের ফলে হাইকোর্টের আদেশটা আর বহাল থাকলো না। তবে আগামীকাল পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এটা নিষ্পত্তি করবেন বলে আশা করছি।
বিচার বিভাগ জনগণের শেষ আশ্রয় স্থল
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, বন্ধের দিনে বিচার বিভাগ বসার কথা নয়। আমরা আগেই বলেছিলাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারছেনা।
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, সারাদেশের মানুষ আপনাদের উচ্চ আদালতে বিচারপতিদের এবং আমাদের আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে আছে। বিচার বিভাগ জনগণের শেষ আশ্রয় স্থল। তাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র থাকবেনা। আইনের শাসন থাকবেনা। দেশের মানুষ সুবিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিচারপতিদের অনুরোধ করে বলতে চাই, বিচার ব্যবস্থাকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। সারাদেশের মানুষ আপনাদের উচ্চ আদালতে বিচারপতিদের এবং আমাদের আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে আছে। বিচার বিভাগ জনগণের শেষ আশ্রয় স্থল। তাই আপনাদেরকে (বিচারপতি) সকল ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে বিচার করার অনুরোধ করছি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার
জয়নুল আবেদীন দাবি করেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার কোনও আইন দ্বারা খর্ব করা হয়নি। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে, নৈতিক স্খলনের কারণে কোন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননা। তবে বিচারিক আদালতের দণ্ড আপিল বিভাগে চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে দণ্ডিত বলার কোন বিধান নেই।
তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের সাজা বা দণ্ড স্থগিত করার এখতিয়ার হাইকোর্ট বিভাগের রয়েছে। যার কারণে তারা সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে। অথচ অ্যাটর্নি জেনারেল আমাদের কিছু অবহিত না করেই হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আজ শুনানি করেছেন।
গত ২৯ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সারাবাংলা/এজেডকে/ আরএ