এইডস নিয়েই এসেছিল রোহিঙ্গারা, আক্রান্ত ২৮৫, মৃত্যু ১৬ জনের
১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:২৮
।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
কক্সবাজার: মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুরা বহন করছে মরণব্যাধির ভাইরাস এইচআইভি (এইডস)। সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে এইডস রোগী রয়েছেন ৪১১ জন। তার মধ্যে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৮৫ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে। যাদের ৯৫ জন হলো রোহিঙ্গা পুরুষ ও ১৪৭ জন হলো রোহিঙ্গা নারী। এছাড়া এইডস আক্রান্ত ছেলে শিশু ২২ ও মেয়ে শিশু ২১ জন। সব মিলিয়ে ২৮৫ জন এইডস আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ১৬ জন। মৃতদের মধ্যে ৬ জন পুরুষ, ৭ জন নারী এবং মেয়ে শিশু ছিল ৩ জন।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন এম এ মতিন বলেন, এটা রোহিঙ্গাদের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, কক্সবাজারের স্থানীয়দের জন্যও তেমন ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে এ বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৪১১ জন রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এটি ছোট্ট একটা অংশ। এর চেয়ে বড় একট অংশ ভেতরে চাপা রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগী শনাক্ত করে সদর হাসপাতালে পাঠান, সেখানেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সিভিল সার্জন আরও জানান, তার কাছে থাকা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৬৮ জন এইডস রোগে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৬ জনই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নাগরিক। বাকি ৪২ জন হোস্ট কমিউনিটি বা কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ।
রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল উখিয়ার স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ রফিক জানান, পুরাতন রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় অনেক রোহিঙ্গা নারী পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা নানা কৌশলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শহরে ঢুকে পড়ছে। দেখা যায়, ওই এলাকার বেশিরভাগ স্থানীয় নারীরা বোরকা ও হিজাব পরেন। যার ফলে তাদের চেহারা দেখা যায় না। আর এটিকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে রোহিঙ্গা নারী পাচারকারী দালাল চক্র। ফলে অনেক রোহিঙ্গা নারী পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। আর ছড়াচ্ছে এইচআইভি ভাইরাস। যদিও ক্যাম্প থেকে পালানোর চেষ্টার সময় রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ছে।
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জিয়া জানান, হোটেল-মোটেল জোনে পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িত রয়েছে অনেক রোহিঙ্গা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মী জানান, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও শিক্ষার অভাবে তারা কুসংস্কারে নিমজ্জিত। জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং এইডস সর্ম্পকে তাদের যতটুকু বোঝানো হয় সেই অনুযায়ী ফলাফল পাওয়া যায় না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক জেসমিন আক্তার জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস থাকার খবরটি খুবই কষ্টদায়ক। অনিরাপদ যৌনতা ছাড়াও নানা কারণে এইডস হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার পাশাপশি শিশুদের নিরাপদে রাখতে হবে।
কক্সবাজারে মাদক নিরাময় কেন্দ্র নোঙ্গর-এর পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ জানান, গত ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ইতোমধ্যে শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে প্রত্যেক রোহিঙ্গার এইচআইভি ভাইরাস পরীক্ষা করা এবং তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর জানান, এইচআইভি শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার জন্য উখিয়া এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। যেখানে এইডস-এর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া এইডস সর্ম্পকে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ১২টি দল কাজ করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের নির্যাতনে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে অনেক রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী সে দেশের সেনাবাহিনী এবং রাখাইনদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ফলে তাদের অনেকের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে।
সারাবাংলা/জেডএফ/এটি