‘নির্বাচনে গুজব ছড়াতে দেশি-বিদেশি চক্র তৎপর’
১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা ছড়াতে দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি চক্র কাজ করছে। এসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সোশ্যালমাধ্যম ও ওয়েবসাইটগুলোকে চিহ্নিত করে গুজব বন্ধে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
শনিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বাগিচা রেস্টুরেন্টে ‘মিডিয়া মিউজিয়াম অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘জাতীয় নির্বাচন: গুজব সহিংসতা প্রতিরোধে সম্প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আশংকা করা হচ্ছে দেশি-বিদেশি এসব চক্র আগামী নির্বাচনে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করবে। তারা পুরো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে, মানুষের মনকে প্রভাবিত করে ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে।’
‘সব ধরনের গুজব, অপ্রচার ও সহিংসতা বন্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এতোকিছুর পরও কোনো একটা জায়গায় গুজব ছড়ানো হলো, পুলিশ ও অন্যান্য মাধ্যমের উচিত হবে তাৎক্ষণিকভাবে তার রেসপন্স করা। তাৎক্ষণিক গুজবের জবাব দিতে পারলে মানুষ সেটি আর বিশ্বাস করতে চাইবে না। ফলে সহিংসতার মতো কোনো ঘটনা আর ঘটবে না’, বলেন এই কমিশনার।
তিনি জানান, গুজব বন্ধে দেশের প্রত্যেক জেলায় ও মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেল গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। রুট লেভেলে থেকে যাতে গুজবটাকে নির্মুল করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ কর্মীদের তথ্য প্রদান করা হয়। এছাড়া সংবাদ কর্মীদেরও দায়বদ্ধতা থাকা উচিত পুলিশ বাদে তাদের তথ্য রি-চেক করা। পুলিশকে কেন সব ব্যাপারে তথ্য দিতে হবে। এর বাইরেও সাংবাদিকদের সোর্স থাকা দরকার। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ হয় সে ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি ক্রাইম বিশেষভাবে কাজ করছে।
গণমাধ্যমের প্রতি তিনি বলেন, ‘কোনো একটি ফেইক নিউজ কোনো একটি অনলাইন পোর্টাল বা টেলিভিশন অথবা সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হলো। একই নিউজ অন্য গণমাধ্যমে প্রকাশের ক্ষেত্রে ফিল্টারিং, রি-চেক, ক্রসচেক ইত্যাদি করা দরকার। একজন করেছে তাই বলে ক্রসচেক না করেই আরকজন করবেন তা যেন না হয়। এরপরেও কেউ যদি গুজবের নিউজ করে তবে বোঝাই যাবে আসলে তিনি কি চান। আইন তার ব্যবস্থা করবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে জিটিভি ও সারাবাংলা ডট নেটের সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘কোনো তথ্য নিশ্চিত না হয়ে আমরা সংবাদ পরিবেশন করবো না। ক্রাইম ও পলিটিক্যাল জার্নালিজমে গুজবের সম্ভাবনা বেশি থাকে। গুজব মোকাবিলায় প্রধান কাজ হলো সত্য সাংবাদিকতা। এটা কি রিপোর্টার কি অফিস আমরা কোনো মিথ্যা পরিবেশন করব না।’
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিএনপি আমলেও আমাদের প্রতিপক্ষ ভাবা হয়েছে, এখনো নির্যাতিত হতে হচ্ছে। সামনে একটি অংশগ্রহণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচন হয়ে গেলেই যে দেশে গণতন্ত্র কার্যকর হবে তা নয়। গণতন্ত্র কার্যকর করতে সব দলের ভূমিকা থাকা দরকার। ফেইক নিউজ গণতন্ত্র কার্যকরের ক্ষেত্রে অনেক বাধা ও হুমকিস্বরূপ। সামনের নির্বাচন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যাতে ভোট দিতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। যেটা ২০১৪ সালের ভোটে তরুণ ভোটাররা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তরুণদের মনের প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে বিপদগামী হয়েছে। সেই বিপদগামিতা অনেক ভয়াবহতা ছড়িয়েছে।’
চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের বার্তা প্রধান রাহুল রাহা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে ছবি তোলা যাবে না, সেটা করব না। যা দেখবেন তাই বলবেন, যা দেখেননি তা বলবেন না। গুজবের ফলে নাসিরনগর চাই না, রামু হতে দিতে পারি না, রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দিতে পারি না। চাঁদে একজনকে দেখা গেলো সেই গুজবে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ল তা হতে দিতে পারি না।’
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সিএনই আশীষ সৈকত বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে গুজব ছড়ানোর আশংকা রয়েছে। গণমাধ্যমকে এটা শক্তভাবে মোকাবিলা করতে হবে। কোনো কিছু ঘটলে পুলিশকে তাৎক্ষণিকভাবে রেসপন্স করতে হবে। গুজব বন্ধে পুলিশকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন এসএ টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ও মিডিয়া মিউজিয়াম অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এম এম বাদশা।
সারাবাংলা/ইউজে/এমও