আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনের স্ট্রোক হয়েছিলো, ধারণা পুলিশের
১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:২৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সূর্যদীঘল বাড়ি, এমিলির গোয়েন্দা বাহিনী, লালসালু, অন্যজীবন-এর মতো কালজয়ী ছবির চিত্রগ্রাহক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
রাজধানীর পান্থপথ অলিও ড্রিম হ্যাভেন হোটেলের অস্টম তলায় অবস্থিত ৮০৯ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন আনোয়ার হোসেন। সেখান থেকেই শনিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে শেরেবাংলা থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
প্রাথমিক সুরতহালকারী শেরে বাংলা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিটন মিয়া বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হোটেল কর্তৃপক্ষের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে দরজার তালা ভেঙে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেন বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপর তাকে ডাকাডাকি করে শব্দ না পেয়ে চিকিৎসক এনে নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনি মারা গেছেন।’
এসআই লিটন আরও বলেন, ‘তার শরীরের কোথাও কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অন্যভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সেটির কোনো নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। দরজার সিটকিনি ভেতর থেকে লাগানো ছিল। পুলিশের উপস্থিতিতেই হোটেলের লোকজন সিটকিনি ভেঙেছে। ভেতরে কিছু ওষুধপত্র পাওয়া গেছে, যা ব্রেন সংক্রান্ত রোগের জন্য খেয়ে থাকেন রোগীরা।’
হোটেলের সহকারী ম্যানেজার সোহেল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ২৮ নভেম্বর সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে তিনি হোটেলে ওঠেন। প্রতিদিন সকালের দিকে একজন এসে তাকে নিয়ে যেতেন আবার রাতের বেলা তাকে রেখে যেতেন। শনিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দুজন লোক আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনকে নিতে এসে তার মোবাইলে কল দেন। মোবাইলে কল বাজে কিন্তু রিসিভ হয় না। তখন তারা ম্যানেজারকে বিষয়টি বলেন। হোটেলের ইন্টারকম থেকেও ফোন করে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। তখন তারা ১১টা পর্ন্ত ওই দুজনকে বসতে বলেন। কারণ ১২টার আগেই পরবর্তী দিনের ভাড়া কনফার্ম না করলে সাধারণত হোটেলে গিয়ে ডাকাডাকি করা হয়। এরপর তাকে ডেকে না পেয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে বিষয়টি জানান।’
আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে ডকুমেন্ট্রি তৈরি করছেন বেলায়েত হোসেন মামুন নামে একজন পরিচালক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপাতত মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আনোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে খবর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফ্রান্সে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ফ্রান্সেও খবর পাঠানো হয়েছে। পরিবার না চাইলে ময়নাতদন্ত করা হবে না। রাতে স্কয়ারের মরচুয়ারিতে মরদেহ রাখার পর আগামীকাল রোববার সকাল ১১টায় সর্বস্তরের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারে নেওয়া হবে।’
আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৪৮ সালে, পুরান ঢাকায়। অসাধারণ চিত্রগ্রহণের জন্য তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে আলোকচিত্রী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন আনোয়ার হোসেন। তার বাবা সিনেমা অফিসে চাকরি করতেন বলে প্রচুর ছবি দেখার সুযোগ পেতেন। সেখান চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। সেই আগ্রহের কারণে স্থিরচিত্রের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য বেশি কিছু ছবির সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে বসবাস করছিলেন। তবে মাঝে মাঝে তিনি দেশেও থাকতেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এমও