Sunday 13 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছেলে শিশুর সঙ্গে বদলে ফেলতে চাওয়া মেয়েটির সফলতার গল্প


১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:২৯

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

গল্পটার শুরু ১৯৯৭ সালে। আফগানিস্তানের একটি গ্রামে বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান হিসেবে পৃথিবীতে আসেন নার্গিস তারাকি।

সেই সময়ে আফগানিস্তানে একটি পরিবারে পঞ্চম কন্যা সন্তানের জন্ম মোটেও সুখের ছিল না। সমাজের লোকজন নানা কথা বলতে শুরু করলো, নার্গিসের বাবাকে এমন প্রস্তাবও দেওয়া হলো, যে তিনি যেন গ্রামের অন্য কারো ছেলে সন্তানের সঙ্গে নার্গিসকে বদলে নেন। এমনকি আরেকটি বিয়ে করে পুত্রসন্তান জন্ম দিতেও পরামর্শ দেওয়া হয় তাকে।

তবে নার্গিসের বাবা ছিলেন অন্যধারার মানুষ। সমাজ বা পরিবারের চাপে ভেঙে পড়েননি তিনি। কারণ মেয়ে হলেও সন্তানদের ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিল না তার। তিনি বিশ্বাস করতেন, সঠিক পরিচর্যা পেলে তার মেয়েরাও মানুষের মতো মানুষ হবে।

২১ বছর পরে বাবার সেই বিশ্বাসের জবাব দিয়েছেন নার্গিস তারাকি। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র ২০১৮ সালের ১০০ নারীর তালিকায় উঠে এসেছে তার নাম। লেখাপড়া শিখেছেন, সমাজকে বদলে ফেলার কাজে মনোনিবেশ করেছেন।

নিজের জীবনের এই বাঁক বদল প্রসঙ্গে নার্গিস বলেন, আফগান সমাজে মেয়ে সন্তানের চেয়ে ছেলে সন্তানের মূল্য বেশি দেওয়া হয়। কারণ ছেলে সন্তান বংশের প্রদীপ এবং তারা পরিবারে খাবারের যোগান দিতে পারে।

ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘লোকজন আমার মাকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়ে কথা বলত। তারা আমার মাকে অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবে দেখত, কারণ তার পুত্র সন্তান ছিল না। কিন্তু আমার বাবা ছিলেন ভিন্নধর্মী মানসিকতার একজন মানুষ। তিনি সবাইকে বলতেন যে, একদিন তিনি প্রমান করে দেবেন যে একজন কন্যা সন্তান ছেলে সন্তানের মতই সবকিছু করতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

তবে এসব প্রমান করা নার্গিসের বাবার জন্য ভীষণ কঠিন ছিল। কারণ তখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা ছিল তালেবানদের হাতে। আশপাশের লোকজনও তাদের সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশা করতো না।

১৯৯৮ সালে তালেবানদের হাত থেকে বাঁচতে পাকিস্তানে পালিয়ে যায় নার্গিসের পরিবার। সেখানে গিয়ে ভীষণ দুর্দশায় পড়েন তারা। জুতার কারখানায় ম্যানেজারের কাজ নিতে হয় নার্গিসের বাবাকে। এরমধ্যেই নার্গিসের মায়ের কোলজুড়ে আসে তার ষষ্ঠ সন্তান, সমাজের বহু আকাঙ্খিত পুত্র সন্তান।

২০০১ সালে তালেবান শাসন অবসান ঘটার পরে আফগানিস্তানে ফিরে যান তারা। এরপর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার যুদ্ধ শুরু হয় পরিবারটির। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন নার্গিস। এখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন নার্গিসের বাবা। তাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

সারাবাংলা/এসএমএন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর