Monday 20 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওরা ‘ভয়ঙ্কর’


২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:২৫ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:৫৮

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়কে ডাকাতি, অপহরণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে অস্ত্রসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় তাদের অপহরণের কাজে ব্যবহৃত দু’টি বাস জব্দ করা হয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকই একেকজন ‘ভয়ঙ্কর অপরাধী’ বলে উল্লেখ করেছে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইমরান (২১), নাটোরের নলডাঙ্গার জিহাদ আলী ও জুলহাস হোসেন, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের শান্ত হোসেন, ঢাকার আশুলিয়ার রকিবুল হাসান ও হাবীবুর রহমান, গাজীপুর কাশিমপুরের রাকিবুল ইসলাম, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার নাঈম মিয়া এবং ময়মনসিংহ সদরের বাবুল হোসেন।

রোববার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘গত ১৭ নভেম্বর উত্তরা থেকে একজনকে যাত্রী হিসেবে তোলার পর তার হাত-পা বেঁধে পরিবারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দাবি করে। অবশেষে ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০ ঘণ্টা পর রাস্তার পাশে তাকে ফেলে দিয়ে যায় তারা। ওই ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালায় র‌্যাব-১ এর একটি দল। অবশেষে গতকাল শনিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের সবার বয়স ১৯ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হলেও ওরা ভয়ঙ্কর অপরাধী।’


মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘এদের কাজই হচ্ছে বাসে যাত্রী হিসেবে তুলে অপহরণ করা। হাত-পা বেঁধে অস্ত্র দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা। আর যেদিন মেয়েদের তোলা হয় সেদিন তারা জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করে তারা। আবার কেউ শ্লীলতাহানির দৃশ্য ভিডিও করে। একপর্যায়ে কোনো নির্জন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। মেয়েদের ভয় দেখিয়ে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানালে ভিডিও করা দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, ‘এদের গ্রুপে ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো সদস্য রয়েছে। রাত ৮টার পর তারা এই রকম অপহরণের কাজ শুরু করে। এরা বড় কোনো স্টপিজ থেকে যাত্রী তোলেন না বরং অপেক্ষাকৃত কম যাত্রী যেখানে থাকেন মূলত সেখান থেকে তারা একজন বা দুজন যাত্রীকে তুলে থাকেন। এরপরই তারা দরজা বন্ধ করে দেয়। ইমরান, শান্ত, রাকিবুল ও জিহাদ হচ্ছে মাস্টারমাইন্ড। এরা প্রত্যেকেই এর আগে একটি ডাকাতি মামলায় ২২ মাস করে জেল খেটে বেরিয়েছে। দিনের বেলায় এদের কেউ অটো রিকশা চালায়, কেউ বাসের হেলপার আবার কেউ লেগুনা চালিয়ে থাকে। রাতের বেলা এরা সার্ভিসিং সেন্টারে দেওয়া বাসগুলোকে ভাড়া নিয়ে অপহরণের কাজ শুরু করে।’

মাহমুদ খান আরও বলেন, ‘এর আগে দেখা যেতো মাইক্রোবাসে, প্রাইভেটকারে করে অপহরণ করা হয়েছে। পরে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এবার এই চক্রটি বাসে অভিনব কৌশলে অপহরণের কাজ শুরু করেছে। বাস দেখলেই সবাই বিশ্বাস করে এবং উঠে পড়ে। কিন্ত যারা যাত্রী তারা বুঝতে পারেন না যে, বাসে যারা রয়েছে তাদের সবাই অপহরণকারী চক্রের সদস্য।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাসের মালিক জানেনই না যে, তার বাস দিয়ে অপরাধীরা অপহরণের মতো ভয়াবহ কাজ করছে। এসব ঘটনায় জড়িত বাকি সদস্যদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’

এসময় র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ১৭ নভেম্বর রাতে বিমানবন্দর সড়ক থেকে অপহৃত হওয়া বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, ওই দিন রাতে অফিস থেকে বের হয়ে বিমানবন্দর মোড়ে দাঁড়ান। এরপর আসমানী নামে একটি বাস এসে তার সামনে দাঁড়ায়। তিনি বলেন এই বাস কি খিলক্ষেতে যাবে? এ কথা বলার সাথে সাথেই একজন পিঠে হাত দিয়ে তাকে তুলে নেন।

বিজ্ঞাপন


গাড়িতে ওঠার পর তিনি বলেন, ‘এতো রাতে তো আসমানী বাস চলার কথা নয়। রাত ১০টার মধ্যেই তো এই রোডে এই বাস বন্ধ হয়ে যায়। আজ কেন আপনারা এই বাস চালাচ্ছেন। এই কথা বলতেই দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর বাসে থাকা অন্য সবাই এসে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ফেলেন এবং গলায় ছুরি ধরে বলেন, বেশি কথা বলবি না, এমন কাউকে ফোন কর যে তিন লাখ টাকা দিতে পারবে। না দিলে তোকে মেরে নদীতে ফেলে দেবো। এরপর তার ছোটভাই তানভীরকে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়। ওই দিন রাত তিনটা পর্যন্ত আধাঘণ্টা পরপর ফোন করে টাকা চাওয়া হয়। দিতে দেরি করায় মারধর করা হয় এবং সিটের নিচে হাত-পা চোখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়।’

তরিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সারারাত ঘোরার পর সারাদিন ৪টি মোবাইল সিমের মাধ্যমে ৬৫ হাজার টাকা বিকাশ করা হয়। এরপর রাত ৮টার দিকে নরসিংদীর শিবপুরের একটি ব্রিজের নিচে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে দেয় তারা।’

অপহরণকারী এই চক্রটি গত ১৫ নভেম্বর গাবতলী টু চান্দরা রোডে চলাচলকারী জনসেবা পরিবহনের একটি মিনিবাস ড্রাইভারকে হাত-পা বেঁধে রেখে বাস নিয়ে শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় চলে যায়। পরে বাসের মালিক ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বাসটিকে নিয়ে আসেন। মালিক ইয়ার হোসেন র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

বিজ্ঞাপন

তীরে এসে তরী ডুবল সিলেটের
২০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৫

আরো

সম্পর্কিত খবর