হলি আর্টিজান হামলা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৫৭
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলার বাদীর আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণের পর আজকের মতো মুলতবি করা হয়েছে। আগামীকাল আবারও জেরা শুরু হবে।
সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহামন এ মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাসের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
দুপুরে বিচারক মজিবুর রহমান বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন এখন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বাদীদের জেরা শুরু করেন। আংশিক জেরা হওয়ার পর আজকের মতো তা মুলতবি করা হয়।
আগামী কাল আবারও জেরা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন, আসামি আসলাম ও রিগানের পক্ষের আইনজীবী ফারুখ আহমেদ।
বাদী এআই রিপন কুমার দাস জবানবন্দি দেওয়া সময় আদালতকে বলেন, সন্ত্রাসীরা আল্লাহ আকবার ধ্বনি দিয়ে গুলি বর্ষণ করে। এ ঘটনার সময় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২০ জন মারা যায়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খুন্ন করার উদ্দেশ্যে এই সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড চালায়।
এদিন বিচারক আদলতের কার্যক্রম শুরুতেই আসামিদের জিজ্ঞাসা করেন, আপনাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না? আসামিরা বিচারের প্রশ্নের জবাবে বলেন, না এখন পর্যন্ত কোনো আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেনি। যদি সরকারিভাবে নিয়োগ দেওয়া সুযোগ থাকে তাহলে আমরা দিতে চায়। একজন আসামি বিচারককে লক্ষ্য করে বলেন, সরকারিভাবে আইনজীবী নিয়োগ দিলে কি আমাদের কথা শুনবে? বিচারক জানান অবশ্যই। এরপরে আসামিরা পৃথকভাবে আইনজীবী নিয়োগ করার জন্য অনুরোধ জানান।
আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ আগে থেকে আইনজীবী নিয়োগ রয়েছে বলেন জানান। পরে বিচারক বাকি চার আসামির জন্য সরকারিভাবে আইনজীবী নিয়োগে জন্য ফোরাম পূরণ করতে বলেন।
এর আগে কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
গত ২৯ আগস্ট পলাতক আসামি মো. শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদের সম্পত্তি ক্রোক এবং তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে আদালত।
আসামিরা হলেন, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম।
ছলতি বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলাটিতে সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর গত মাসের ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন।
অন্যদিকে চার্জশিটে ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া চার্জশিটে অভিযুক্ত অপর ১৩ জন মৃত্যুবরণ করায় তাদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলাটিতে গত ৮ আগস্ট আট আসামির বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করে আদালত। চার্জশিটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমান না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নয়জন ইতালিয়, সাত জাপানি, এক ভারতীয় ও দুই বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হন। রাতভর সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। পরে সেখান থেকে পাঁচ জঙ্গির সাথে রেস্তোরার প্রধান শেফ সাইফুল ইসলামের লাশ উদ্ধার হয়। আর সাইফুলের সহকারী জাকির হোসেন শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
একই ঘটনায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেডের আঘাতে রেস্তোরাঁর বাইরে নিহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান।
পাঁচ জঙ্গিসহ শেফ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী শেফ শাওনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে দীর্ঘদিন পরে থাকার পর বেওয়ারিশ ঘোষণা করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সারাবাংলা/এআই/এমআই
সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলি আর্টিজান হলি আর্টিজান হামলা মামলা হামলা