Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেয়ালের জন্য পাতা ফাঁদে প্রাণ গেল মানুষেরও


৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:১৪

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মুরগি বাঁচাতে শেয়াল আসার পথে বাঁশের বেড়া দিয়ে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিলেন কৃষক মো.আহাম্মদ নবী (৭০)। পথ চলতে গিয়ে সেখানে বিদ্যুতায়িত হয়ে করুণ মৃত্যু হয় আহাম্মদ নবীর পাশের গ্রামের যুবক জিয়াউর রহমানের (৩৫)। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আহম্মদ নবী তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে রাতের আঁধারে জিয়াউর রহমানের লাশ ফেলে দিয়ে আসে খালে।

পরে লাশ উদ্ধার হলেও মৃত্যুর কারণ অজানা থেকে গিয়েছিল। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে একমাসের মধ্যেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে। কৃষক আহাম্মদ নবীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের দক্ষিণ জিরি গ্রামের আবু সৈয়দের ছেলে। আর আহম্মদ নবী একই ইউনিয়নের মহিরা গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে।

পিবিআই সূত্রমতে, গত ৯ অক্টোবর বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন দিনমজুর জিয়াউর রহমান। এই ঘটনায় তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে পটিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ১৩ অক্টোবর ভোরে জিরি মহিরা খালের পাশে জিয়াউর রহমানের লাশ দেখতে পায়। পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর পরিবারের পক্ষ থেকে সেটি শনাক্ত করা হয়। এরপর জিয়াউর রহমানের মা বাদি হয়ে তার চাচাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এজাহারভুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করে।

এই অবস্থায় গত ২১ অক্টোবর মামলাটি তদন্তের জন্য আসে পিবিআইতে। ৩০ অক্টোবর থেকে তদন্ত শুরু হয়। ১ ডিসেম্বর নগরীর আসাদগঞ্জ থেকে আহাম্মদ নবীকে গ্রেফতার করা হয়। ২ ডিসেম্বর আহাম্মদ নবী চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম কামরুন নাহার রুমির আদালতে জবানবন্দি দেন।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, জবানবন্দিতে আহাম্মদ নবী জানান, গত অক্টোবরে ৬৫টি মুরগির বাচ্চা কিনে বসতঘরে বাঁশের তৈরি খাঁচায় তিনি লালন-পালন শুরু করেন। কিন্তু প্রতিরাতেই শেয়াল এসে খাঁচায় ঢুকে মুরগি নিয়ে যাচ্ছিল। এভাবে প্রায় ১৫টিরও বেশি মুরগি শেয়াল খেয়ে ফেলেছে।

শেয়ালের উৎপাতে অতীষ্ঠ হয়ে তিনি শেয়ার আসার পথে বাঁশের বেড়া দিয়ে দেন। কিন্তু এরপরও বেড়া টপকে শেয়াল এসে মুরগির বাচ্চা নিয়ে যেতে থাকলে তিনি সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেন। এতে দুইদিনে দুটি শেয়াল বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়।

গত ৯ অক্টোবর সন্ধ্যার পর সেই বেড়ার সঙ্গে লাগোয়া অবস্থায় জিয়াউর রহমানের লাশ দেখতে পান আহাম্মদ নবী। তিনি বুঝতে পারেন, জিয়াউর রহমান সেই পথ দিয়ে যেতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। তিনি দ্রুত কয়েকজন ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের সঙ্গে নিয়ে রাতেই জিয়াউর রহমানের লাশটি মহিরা খালে ফেলে দিয়ে আসেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (জেলা) মো.কামাল আব্বাস সারাবাংলাকে বলেন, রাতে লাশ ফেলে দিয়ে সকালে এসে আহাম্মদ নবী বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে বাঁশের বেড়া তুলে ফেলে দেন। মামলা তদন্ত শুরুর পর এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন তথ্যের সঙ্গে এই তথ্যও আমাদের কানে আসে। এসময় আহাম্মদ নবীর খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারি, তিনি জিয়াউর রহমানের লাশ পাবার পর থেকে আর এলাকায় নেই। শহরে থাকেন। তখন আমাদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। পরে আহাম্মদ নবীকে গ্রেফতার করি এবং পুরো বিষয় জানতে পারি।

তিনি বলেন, ভিকটিমের পরিবার তার চাচাকে সন্দেহ করেছিল। আসলে তারা যাদের সন্দেহ করেছিল তারা কেউই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর