Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খেলাপি ঋণে প্রার্থিতা বাতিল হলেও কর ফাঁকিতে নয়


৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৬

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীদের অনেকেরই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তবে এই নির্বাচনে কর ফাঁকির কারণে প্রার্থিতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে অংশ নিতে হলফনামায় দাখিল করা আটটি তথ্যের মধ্যে কর সংক্রান্ত তথ্য দাখিলের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, হলফনামায় আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দাখিলের বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে এবার করখেলাপি কিংবা বকেয়া কর রয়েছে— এমন প্রার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন।

আরও পড়ুন- নির্বাচন ঘিরে খেলাপি ঋণ থেকে মুক্ত হতে আবেদনের লম্বা লাইন

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, হলফনামায় আটটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়। এগুলো হলো— প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমানে ফৌজদারি মামলার আসামি কি না, আগের কোনো সময় ফৌজদারি মামলার আসামি ছিলেন কি না, পেশার বিবরণ, প্রার্থীর নিজের ও তার ওপর নির্ভরশীলদের আয়ের উৎস, প্রার্থী ও তার ওপর নির্ভরশীলদের এবং তার স্ত্রী বা স্বামীর সম্পদ বিবরণী (অস্থাবর, স্থাবর সম্পদ দায় ইত্যাদি তথ্য), এর আগে সংসদ সদস্য ছিলেন কি না (থাকলে ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও এর কী পরিমাণ অর্জন সম্ভব হয়েছিল, তার বিবরণ) এবং ঋণ সংক্রান্ত্র তথ্য। তবে এর আগের কোনো কোনো সময় হলফনামায় আয়কর বিবরণী উল্লেখের বাধ্যবাধকতা থাকলেও আয়কর না দিলে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আয়কর দেওয়া কোনো ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব। আয়কর না দিলে তার বিরুদ্ধে এনবিআরের আইন অনুযায়ী মামলা হতে পারে। তবে আয়কর না দিলে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই।’

নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রে যেসব তথ্য উল্লেখ করতে হয়, তার মধ্যে আয়করের তথ্য না থাকার বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে হেলালুদ্দীন আহমদ আরও বলেন, ‘আইনে আছে— ঋণখেলাপি বা যারা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে টাকা দেয় না কিংবা যাদের বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনের মতো বিভিন্ন ইউটিলিটি সেবার বিল বকেয়া আছে, তারা প্রার্থিতা পাবেন না। অর্থাৎ তারা সেবা নিচ্ছেন, কিন্তু সেবার টাকা দিচ্ছেন না। আয়কর কিন্তু সেবা না, এটা আর্থিক দেনা বা ইউটিলিটি বিলের মধ্যে পড়ে না।’

এনবিআরের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, প্রার্থীদের কর সংক্রান্ত কোনো তথ্য এনবিআরের কাছে জানতে চাওয়া হয়নি। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এ কারণে আয়কর না দিয়েও অনেক প্রার্থীই এবারের নির্বাচনে ‘বৈধ’ হয়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য জিয়া উদ্দিন মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আমাদের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের কাছে কোনো প্রার্থীর কোনো তথ্য যাচাইও করতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখেই বলছি, কোনো প্রার্থীর ক্ষেত্রে সম্পদের তথ্যে সামঞ্জস্য পাওয়া না গেলে আমরা এমনিতেই ব্যবস্থা নিতে পারি। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের এ ধরনের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংসদে যারা আইন প্রণয়ন করবেন, কর সম্পর্কে অবশ্যই তাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে এবং নিজেদেরও এ বিষয়ে স্বচ্ছ থাকতে হবে। অনেক দেশেই নির্বাচনি হলফনামায় আয়করের তথ্য না দিলে শাস্তির বিধান রয়েছে। এমনকি ভারতেও নির্বাচিত হওয়ার কয়েক বছর পর করখেলাপি প্রমাণিত হওয়ায় একজনের সংসদ সদস্যপদ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে।’

বাংলাদেশেও আয়করের তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে আরপিও সংশোধন করে আয়করের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তবে এক্ষেত্রে এনবিআরকেও তার দুর্বলতা কমিয়ে আনতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আগের দুই-তিন বছরের আয়করের বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসে এনবিআর। অর্থাৎ এনবিআরকে তাদের হয়রানির মানসিকতা দূর করতে হবে।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

আয়কর ফাঁকি ঋণখেলাপি খেলাপি ঋণ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর