আমাকে ঝানু রাজনীতিবিদ ভাবাটা হবে অবিচার: মাশরাফি
৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৪২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দিয়েছেন আগেই। নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সে খবরও এর মধ্যে অনেকেরই জানা। কয়েকদিন আগেই নিজের ফেসবুক পোস্টে রাজনীতিতে আসার কারণটা ব্যাখ্যা করেছিলেন।
আজ মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) মিরপুরে অনানুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে সেই কারণটাই আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক জানালেন, এখনই তাকে ঝানু রাজনীতিবিদ ভাবাটা হবে অবিচার।
খেলা ছাড়ার আগেই কেন রাজনীতিতে এসেছেন, স্বাভাবিকভাবেই সবার আগে এ প্রশ্ন আসবে। মাশরাফি আগের কথাটাই বললেন আরেকবার, ‘প্রথমত ধরেন, আমি যেটা চিন্তা করেছি… আর সাত থেকে আট মাস বাকি আছে। বিশ্বকাপের পর আমার ক্যারিয়ার যদি শেষ হয়, নেক্সট সাড়ে চার বছরে কি হবে আমি জানি না। আর আমার একটা সুযোগ আসছে, যেটা আমি এনজয় করি সবসময়, মানুষের সেবা করার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা সুযোগ দিয়েছেন, আপনারা জানেন যে আমার একটা ফাউন্ডেশন আছে, আমার এলাকার জন্য কিছু কাজ করার। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য গ্রেট অপরচুনিটি তাদের জন্য কাজ করার।’
‘স্রেফ এখান থেকেই মনে হয়েছে—হয়তো সাড়ে সাত-আট মাস পর তো আবার জাতীয় নির্বাচন হবে না। ক্রিকেট না, অন্য স্পোর্টসেও, আমাদের জন্য পারফর্মেন্সটা সবার আগে। বাংলাদেশ ক্রিকেট সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কি-না, সেটা অবশ্যই আপনারা জানেন, বাংলাদেশ এখন আগের থেকে অনেক বেটার টিম। সুযোগ সুবিধাও আগের থেকে অনেক বেশি আছে। আমার বিশ্বাস সামনে আরও এগিয়ে যাবে।’
কিন্তু রাজনীতিতে যদি আসবেনই, তাহলে এতদিন জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কিছু বলেননি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘তখন কোটা আন্দোলন নিয়ে যেটা হয়েছে। এত গভীর রাজনীতি আমি করিনি, জানিও না। যেটা পরিষ্কারভাবে বললাম আমার উদ্দেশ্য খুব সিম্পল, যেটা মানুষের জন্য করে শান্তি পাই। টাচ পাই। ততটুকু। আমাকে যদি ডিপ লেভেলের পলিটিশিয়ান ভাবেন সেটা আমি এখনো হয়তোবা না, হইনি। সো আমাকে ওই পর্যায়ে ভাবলে আমার প্রতি অবিচার হবে। আমার অভিজ্ঞতাটা একদমই নতুন। তবে আমি যেটা বলেছি ভাল কাজ করতে চাই। সেটা হয়তো সামনে দেখা যাবে কতটুকু করতে পারি।’
কিন্তু মাশরাফি তো এতদিন জনমানুষের ছিলেন। এখন রাজনৈতিক দর্শনের কারণে তার বিপক্ষে অনেক কথা আসছে। এ ব্যাপারে মাশরাফি বললেন, ‘সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে আপনার নিজের পারসোনালিটি থাকা উচিত। আপনি যদি কোনো দলকে সাপোর্ট করেন তাহলে অবশ্যই সেটা প্রকাশে বলা উচিত। এমন অনেকেই আছে যারা সাপোর্ট করে কিন্তু বলতে পারে না। প্রত্যেকে যে যার দল করে তার সম্মানটা থাকা উচিত এবং তার মতো করে দেশের জন্য কাজ করবে এই মানসিকতাই থাকা উচিত। যারা কমেন্ট করছে বা করবে তা আমার নিয়ন্ত্রণে নাই।’
রাজনীতির মাঠে যখন আসলেনই, তখন নিজেকে যোগ্যপ্রার্থী প্রমাণ করার জন্য কী করবেন বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে নিজেকে ভালো মনে করেন কোন দিক দিয়ে। এই প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘আমি তো সেটা একবারও বলিনি, আমি আপনার চেয়ে বেটার। তাকে আমি সম্মান করি। তাকে অসম্মান করে আমি কীভাবে বলব উনার চেয়ে আমি বেটার। সেটা অবশ্যই আমি বলব না। এ অবস্থায় আমি নিশ্চয় যাব না। অবশ্যই আমি চাই—আমি আমার মতো করে বলব। আরেকজনকে ছোট করে আমি বড় হবো সেই সুযোগ নিশ্চয় নাই। দেখুন, আমি একজন স্পোর্টসম্যান। ওখানেও কিছুটা এই মানসিকতা থাকতে হবে। ওখানে গিয়ে আমি তাকে বলতে পারব না, ওর চেয়ে আমি ভালো। আমাকে আপনারা ভোট দেন, সেই সুযোগ আমার নাই।’
মাশরাফি বার বারই বললেন, ‘নির্বাচনে কী হবে সেটা অনেক পরের ব্যাপার। আপাতত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেই তার মনযোগ। সেটা শেষ করেই মন দিতে চান রাজনীতিতে। সবাইকে সেই পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহবান জানালেন তাই।
সারাবাংলা/এএম/এমআই