মেহেরপুর মুক্ত দিবস আজ
৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:২৬
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
মেহেরপুর: আজ ৬ ডিসেম্বর, মেহেরপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর তথা মেহেরপুর জেলা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় একে একে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বলয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ৫ ডিসেম্বর রাত থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী গোপনে মেহেরপুর ছেড়ে পালাতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর সকালে মিত্র বাহিনী মেহেরপুর শহরে প্রবেশ করলে অবরুদ্ধ জনতা মিত্র বাহিনীর সঙ্গে জয়ের উল্লাসে যোগ দেয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তৎকালীন মেহেরপুরের এসডিও তৌফিক এলাহির সক্রিয় ভূমিকায় ছাত্র-জনতা, আনসার-মুজাহিদদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়।
সেদিনের স্মৃতি হাতড়ে মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ ঘটনার বর্ণনা দেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা জানান, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রথম সরকারে শপথ গ্রহণের পর মেহেরপুর কার্যত হানাদার বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সে অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল দুপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে সড়ক পথে মেহেরপুর প্রবেশ করার সময় সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামে নির্মম হামলা চালালে এ অঞ্চলের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
ভীতসন্ত্রস্ত জনসাধারণ ঘর-বাড়ি, ভিটে-মাটি ত্যাগ করে এ জেলার সীমান্ত পার হয়ে ভারতের পশ্চিম বাংলায় আশ্রয় গ্রহণ করে। প্রতিরোধ যুদ্ধে অভিজ্ঞ ছাত্র-শিক্ষক-আনসার-মুজাহিদরাও ভারতের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিতে থাকেন। সেই সঙ্গে ভারতের হৃদয়পুর, বেতাই, শিকারপুর, করিমপুর, কাচুলিয়া, বিহারসহ বেশ কয়েটি জায়গায় প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়।
ভারতীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশি তরুণরা গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রথম অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অস্ত্র না পাওয়ায় তাদের মনোবল ভেঙে পড়লেও দেশ স্বাধীনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে অনেকেই দেশে এসে বিভিন্ন ক্যাম্প লুট করে সে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
এক সপ্তাহের মধ্যে মেহেরপুর সরকারি কলেজ, ভিটিআই ও কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে দিশেহারা পাক সেনারা মেহেরপুর ছাড়ার সময় দিনদত্ত ব্রিজ, খলিশাকুন্ডি ও তেরাইল ব্রিজ ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস করে বৈদ্যুতিক বিভিন্ন স্থাপনা। এসময় কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যন কারও জানা নেই।
তবে পাক সেনারা মেহেরপুর ছেড়ে গেলে সরকারি কলেজ ও ওয়াপদা মোড় এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের কঙ্কাল সংগ্রহ করে সমাহিত করা হয় কলেজ মোড়ে। নাম না জানা অসংখ্য শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় পরবর্তীতে সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধ ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শহীদদের কবর জিয়ারত, স্মৃতি সৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে জানান জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহম্মেদ।
সারাবাংলা/এমএইচ