‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে নির্বাচনের পর সরকারের সঙ্গে বসব’
৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৯
।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘সাম্প্রতিক সময়ের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচনের পর এই আইন নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। সামনে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার পর্যালোচনায় বোঝা যাবে, এই আইন মানবাধিকারের জন্য কতোটা উদ্বেগের, পর্যালোচনাতেই বেরিয়ে আসবে—এখানকার সংবাদমাধ্যম কতোটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করছে। অবশ্যই নির্বাচনের সময় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি।’
এসডিজির শর্ত-১৬ মেনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় জাতিসংঘ
বাংলাদেশে জাতিসংঘ এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপে এমন মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পোর ঢাকার আগারগাঁওয়ের কার্যালয়ে গত ২৫ নভেম্বর (রোববার) দুপুরে সারাবাংলার এই প্রতিনিধির সঙ্গে তার আলাপ হয়।
বাংলাদেশের মুক্তমত এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে গিয়ে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী—মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা জনগণের নাগরিক অধিকার। এই অধিকার বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। সাম্প্রতিক সময়ের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। এই আইন নিয়ে সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন পরিষ্কারভাবে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সামনে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার পর্যালোচনায় বোঝা যাবে, এই আইন মানবাধিকারের জন্য কতোটা উদ্বেগের, পর্যালোচনাতেই বেরিয়ে আসবে, এখানকার সংবাদমাধ্যম কতোটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করছে।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব বোঝাতে গিয়ে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। একই সঙ্গে, সংবাদমাধ্যমকেও আরও দায়িত্ব নিয়ে, নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সংবাদমাধ্যম যা প্রকাশ করছে এবং যে বিষয়ে গবেষণা বা কাজ করছে, সেখানেও যেন পেশাদারিত্বের পূর্ণ মান বজায় থাকে।’
সম্প্রতিকালে সরকারের তরফে প্রণয়ন করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সম্পর্কে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়। এখন অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সাইবার স্পেসকে মানুষ ব্যবহার করছে—যা একেবারেই নতুন। যোগাযোগমাধ্যমের এই নতুন ক্ষেত্রগুলোর ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিতে অনেক দেশই চেষ্টা করছে। নতুন মাধ্যমগুলো নিয়ে সহজেই ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব মাধ্যমে সহজেই সমাজে ক্ষতিকারক উপাদান ছড়িয়ে দেওয়া যায়। অন্যদিকে, সাংবাদিকের বা সংবাদমাধ্যমের কাজ কিন্তু ভিন্ন। সংবাদমাধ্যম দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে, কখনোই সমাজে ক্ষতিকারক উপাদান ছড়িয়ে দেয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পর ইউপিআর (মানবাধিকার পরিস্থিতি) নিয়ে আগামী বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। সরকার প্রতিজ্ঞা করেছে, এই আইনটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দেবে না। অবশ্যই নির্বাচনের সময় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি।’
জেনেভায় গত মে মাসে অনুষ্ঠিত ইউপিআর-এর বৈঠকে বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশকে সংশোধন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশকে জাতিসংঘের দেওয়া পরামর্শগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণকে সাধুবাদ জানাই। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার আগামী কমিটির সদস্য বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং নিজের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ আরও কাজ করার সুযোগ পাবে।’
তিনি বলেন, ‘ইউপিআর এর পরামর্শগুলো বাস্তবায়নে সুশীল সমাজ, সরকারি কর্মচারীসহ সবাইকে নিয়ে কাজ করছি। ইউপিআর-এর পরামর্শগুলো অনুযায়ী, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আইনগুলো আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞা করেছে, আইনগুলো আন্তর্জাতিক মানের হবে। বাংলাদেশ সিডাসহ একাধিক বৈশ্বিক ফোরামে প্রতিজ্ঞা করেছে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতাসহ সকল মানবাধিকার নিশ্চিত করবে।’
জাতিসংঘের পরামর্শগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা যেসব বিষয়ে বাংলাদেশকে উন্নতি করতে পরামর্শ দিয়েছে, ওই বিষয়ের উন্নতি করা আসলেই চ্যালেঞ্জের। তবে হ্যাঁ, ওইসব পরামর্শের কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দারুণ উন্নতি করছে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো কিছুই করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সবগুলো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি করার সামর্থ্য আছে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার সকল পরামর্শ বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করবে।’
সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই