Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আপনার বিরুদ্ধে লেখার পরও সাংবাদিকদের ভালোবাসেন কেন’


৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:২৯

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘কলম সৈনিকদের প্রতি আমার বাবার অপার ভালোবাসা ছিল। অনেক সময় অভিমান করে বলতাম- আপনার বিরুদ্ধে এত লেখে, তারপরও আপনি সাংবাদিকদের এত ভালোবাসেন কেন? তিনি বলতেন, সাংবাদিকরা স্বাধীন। তারা প্রশংসা যেমন করবে, সমালোচনাও করবে।’

বৃহস্পতিবার (০৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ‘সাংবাদিকবান্ধব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ’র প্রকাশনা উৎসবে প্রয়াত মহিউদ্দিনের বড় ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এই স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ারের সভাপতিত্বে, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল বলেন, আমার বাবা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। তার সংগ্রামী জীবনকে মূল্যায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা সবসময় সৎ-সাহসী রাজনীতিবিদদের মূল্যায়ন করেছেন।

নওফেল বলেন, বাবা সবসময় বিশ্বাস করতেন- সাংবাদিকরা যদি মুক্ত-স্বাধীন থাকেন এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারেন, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভালো হবে। তিনি শ্রমজীবী মানুষের জন্য আজীবন কাজ করেছেন। সেই হিসেবে সাংবাদিকরাও ছিলেন উনার অনেক আপন।

নওফেল আরও বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় বাবার মতো আমারও অব্যাহত ভূমিকা থাকবে। লেখনীর মাধ্যমে সমাজের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যে লড়াই, সে লড়াইয়ে সাংবাদিকসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

একই অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.অনুপম সেন বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী কত বড় মাপের নেতা ছিলেন তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও অনেক হবে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রতিবাদ করেছিলেন। তাকে দেশত্যাগ করতে হয়েছিল। পরবর্তীতে আবার ফিরে আসেন। যারা প্রতিবাদ করেছিলেন সেই গুটিকয়েক ব্যক্তির মধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরী একজন। তিনি বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা ছাড়া কারও কাছে মাথা নোয়াননি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মৃত্যুর পর মানুষ চলে যায় স্মৃতির অন্তরালে। কিছু কিছু মানুষ হৃদয়ে থেকে যান তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে। তেমনি একজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আরেকজন তারই রাজনৈতিক শিষ্য এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবন তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা মহিউদ্দিন চৌধুরী। এই ধরনের অসংখ্য জনসম্পৃক্ত কাজের জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মানুষ মনে রাখবে আজীবন।

তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার আন্দোলন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ, স্বৈরাচার-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী এমন কোন আন্দোলন ছিল না, যেখানে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নেতৃত্ব দেননি। চট্টগ্রামের স্বার্থের প্রশ্নে আমরা তাকে আপোষহীন দেখেছি। এজন্যই মহিউদ্দিন চৌধুরী চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, রাজনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এসে অনেক রাজনীতিবিদ আপোষ করে ফেলেন। কিন্তু এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি অবশ্যই সফল এবং সাহসী রাজনীতিবিদ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। সে কারণে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সামরিক শাসক ও খুনিদের। অনেক নেতা সেসময় ঘাতক পক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরী সেটা করেননি। চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই উনার মতো আর কেউ করে নিতে পারেননি। নাই। উনার মত রাজনীতিবিদও হয়তো আর জন্ম নেবেন না।

বিজ্ঞাপন

মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর রুষ্ট আচরণে কেউ কেউ ব্যথিত হয়েছেন। সেজন্য পারিবারিকভাবে ক্ষমা চাইছি। সাংবাদিকদের সাথে উনার একটা অন্য ধরনের সম্পর্ক ছিল।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ বলেন, এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে সাংবাদিকদের সম্পর্ক ছিল আন্তরিক। অনেক সাংবাদিক তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছেন। চট্টগ্রাম ও সারাদেশে যে সাংবাদিকরা তার স্নেহধন্য আমিও তাদের একজন। চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা উনাকে যেভাবে দেখেছেন, তাদের মনের অভিব্যক্তি তারা এই গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু।

১৯৬ পৃষ্ঠার স্মারক গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী। বইটিতে ৫৬ জন সাংবাদিকের লেখা সংকলিত হয়েছে।

স্মারক গ্রন্থের ভূমিকা রচনা করেছেন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। গ্রন্থটিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি আছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বর্ণনা ও ছবি।

সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নওফেল স্মারকগ্রন্থ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর