জাতীয় পার্টি এখন কঠিন সময় পার করছে: এরশাদ
৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:১৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন কঠিন সময় পার করছে, আমরা ভেঙে পড়ি নাই। আগামীতে হয়ত আরও কঠিন সময় পার করতে হবে। সে জন্য জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে জাতীয় পার্টি ঘোষিত ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মোবাইল ফোনে সাবেক রাষ্ট্রপতি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন।
এরশাদ বলেন, ‘কেউ দল ছেড়ে যেওনা, কেউ নিরুৎসাহিত হইওনা। সবাই এমপি হতে পারে না, সবাইকে দলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ সুদিন আমাদের আসবেই। ভালো থেকো, সবাই।’
এর আগে বেলা ১২টার দিকে সিএমএইচ থেকে বাসায় ফেরার পথে গাড়িতে বসেই নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি বেঁচে আছি, ভালো আছি। তোমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে শক্তিশালী করো। নতুন মহাসচিবকে সহায়তা করো।’
নতুন মহাসচিবের নির্দেশনা মেনে দলকে আরো গতিশীল করতেও আহ্বান জানান তিনি। আমরা নির্বাচনে যাবো, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অনেক ভালো করবে। আমি বেঁচে আছি, দলকে বিজয়ের পথে নিয়ে যাব আমরা। তোমরা জাতীয় পার্টির পতাকাতলেই থেকো, কেউ যেন দল না ছাড়ে সে আহ্বানও জানান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’র আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘পার্টি চেয়ারম্যান ডাক্তারের পরামর্শেই আছেন। মেডিকেল বোর্ড মনে করলে, তিনি সিঙ্গাপুরেই চিকিৎসা নেবেন। এরশাদ রাজনীতিতে আছেন- তিনিই জাতীয় পার্টি পরিচালনা করছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ সকল সিদ্ধান্তই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিচ্ছেন। স্বাধীনভাবেই তিনি রাজনীতি করছেন এবং দল পরিচালনা করছেন।’
আলোচনা সভায় জিএম কাদের আরও বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে যারা ক্ষমতা প্রয়োগকারী বলেছে, তারাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এর ক্ষমতার সঙ্গে পার্টির প্রধান হয়ে পরবর্তীতে আরো বেশি ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন। এতে ক্ষমতার ভারসাম্য শেষ হয়ে গেছে। যারা এরশাদের শাসনামলকে নিন্দাবাদ করেছেন, তারা বুকের ওপর হাত দিয়ে বলতে পারবেন না, এরশাদ পরবর্তী সময়গুলো দেশের ভালো কেটেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন মূল্যায়নের সময় এসেছে, এরশাদের শাসনামল নাকি পরবর্তী সরকারগুলোর শাসনামলে দেশ ভালো চলেছে।’
জি এম কাদের আরও বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন বয়োঃজেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, তার দেশ পরিচালনার দক্ষতা ও ক্ষমতা আছে। তাই দেশের মানুষ এখনও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ফিরে যেতে চায়। দেশের মানুষ এখনও এরশাদকে ভালোবাসেন। কিন্তু যারা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তারা শুধু এরশাদেই ভয় পায়। কারণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
জিএম কাদের বলেন, ‘কেউ যদি দলের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে চায় তা বরদাশত করা হবে না। জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাওয়া মানেই দেশের গণতন্ত্র সমুন্নত হওয়া। জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হলেই দেশের সংবিধান সুসংহত হয়।’
সভাপতির বক্তৃতায় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতীয় পার্টি চায় সাধারণ মানুষ যেন নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোট ডাকাতি ও ব্যালট ছিনতাই জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে না।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ১৪ দলের সঙ্গে অংশ নিয়ে মহাজোটের মাধ্যমে নির্বাচন করবে।’
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করেছে। এবার আপনারা আমাদের পাশে থাকুন, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা লাঙ্গলকে বিজয়ের পথে নিয়ে যেতে চাই।’
পার্টি চেয়ারম্যানের প্রতি জুলুম ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতিকে ১২দিন মাটিতে ঘুমাতে হয়েছে। বিনা বিচারে সাত বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। যারা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি অবিচার করেছে, আজ তারাই কারাগারে দিন পার করছে। যারা র্যাব দিয়ে মানুষ খুন করেছে, অপারেশন ক্লিনহাটের নামে মানুষ হত্যা করেছে তারাই আজকে মানুষ খুনের ধুয়া তুলছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন করে মহাসচিবের দায়িত্ব নেয়ার পর এখন এক মাসেরও কম সময় আছে। তারপরও আমরা আগামী প্রজন্মেও জন্য বাসযোগ্য একটি দেশ গড়তে চাই।’
জাতীয় পার্টির সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য নূর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী, সুনীল শুভ রায়, এস.এম. ফয়সল চিশতী, উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁঞা, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহজাদা, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সদস্য সচিব মো. বেলাল হোসেন, শ্রমিক পার্টির সভাপতি-একেএম আশরাফুজ্জামান খান, ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক মোড়ল জিয়া।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে