Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘পাগলের কথা’ বললেন প্রধানমন্ত্রী


১০ জানুয়ারি ২০১৮ ২০:১১

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

‘আগামীতে কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে জনগণই তা প্রতিহত করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম (শীতকালীন) অধিবেশনের তৃতীয় দিনে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এর আগেও দেশের জনগণ নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা সফল হতে দেয়নি। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের হাতে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, ক্ষমতা তুলে দেয়া। জনগণ এখন গণতন্ত্রের সুফল পেতে শুরু করেছে।’

এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও কিছু বিষয়ে কথা বলেন, সেগুলোর মধ্যে আছে-

সংসদে জিয়া পরিবারের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ

সংসদে বহুল আলোচিত প্যারাডাইস পেপারে প্রকাশিত জিয়া পরিবারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তালিকায় রয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়াম্যান তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকো ও তার স্ত্রী শর্মিলা রহমান। সে সময় ওই পরিবারের নতুন করে বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার এবং মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ প্রায় অর্ধ শত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের অর্থ পাচারের তালিকাও তুলে ধরেন তিনি।

এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির শ্বেতপত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের জনগণের সম্পদ লুটপাট ও পাচার করতে দেয়া হবে না। এ ধরনের অপকর্ম তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনগণের পয়সা জনগণকে ফেরত দেয়ার যে সব আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, তার সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজ কাটিং তুলে ধরেন। এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে ২৫৬ পৃষ্ঠার প্রশ্নের জবাবে ১৫৩ পৃষ্ঠাতেই স্থান পেয়েছে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থের বিবরণ।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে এ সব তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশি এবং বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে সরকারের সকল সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে ২০১২ সালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫ শ ৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুরি ডলার সে দেশ থেকে ফেরত আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে প্রচুর অর্থ পাচার করেছেন। তারেক এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন যৌথভাবে একটি বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বিনিময়ে প্রায় ২১ কোটি টাকার মতো সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে পাচার করেছেন। এ ব্যাপারে শুধু বাংলাদেশ নয়, আমেরিকার এফবিআইও তদন্ত করেছে। এর সূত্র ধরে এফবিআই এর ফিল্ড এজেন্ট ডেব্রা ল্যাপ্রিভোট ২০১২ সালে ঢাকায় বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।

এ মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের ৭ বছরের সাজা হয়। একইভাবে লন্ডনের ন্যাট ওয়েস্ট ব্যাংকেও প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা আরও বলেন, এ ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক দেশে খালেদা জিয়ার ছেলেদের টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা এখনো তদন্তাধীন। এর মধ্যে অন্যতম হলো- বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি, সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকায় খালেদা জিয়া তিন নম্বর হিসেবে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। খালেদা জিয়া প্রকাশিত এসব সংবাদের কোনো প্রতিবাদ জানাননি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারাডাইস পেপারসে নতুন করে প্রকাশিত নামের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নাম।

এ ছাড়া নতুন প্রকাশিত ২৫ হাজার নথিতে বের হয়ে আসছে আরও রাঘব বোয়ালদের নাম ও তাদের অর্থ পাচারের নানান তথ্য।

তিনি বলেন, প্যারাডাইস পেপারসে দেখা যায়, তারেক জিয়া ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে কেইম্যান আইসল্যান্ড এবং বারমুডায় ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন।

এ ছাড়াও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ওয়ান গ্রুপের তিনটি কোম্পানি খোলা হয় ট্যাক্স হ্যাভেনে। তারেক জিয়ার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো বারমুডার বিভিন্ন কোম্পানিতে ২০০৫ সালে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। কোকোর মৃত্যুর পর এই বিনিয়োগ তার স্ত্রী শর্মিলা রহমানের নামে স্থানাস্তরিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধৈভাবে ট্যাক্স হ্যাভেনে জিয়া পরিবারের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

অন্যান্য ব্যবসায়ীদের নাম প্রকাশ

জিয়া পরিবারের সদস্য ছাড়াও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির একাধিক নেতাসহ প্রায় অর্ধ শত প্রতিষ্ঠান এবং এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরা হলের ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আওয়াল, দুই ছেলে মোহাম্মদ তাবিদ আওয়াল, মোহাম্মদ তাফসির আওয়াল, পাথ ফাইন্ডার ফাইন্যান্স ও হ্যান্সিয়াটিক লিমিটেডেটের প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরুল্লাহ। তার স্ত্রী নিলুফার জাফরুল্লা, ছেলে ইল্ডেস্টার লিমিটেডের কাজী রায়হান জাফর।

এ ছাড়াও কর্পেনিকাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কফিল এইচ এস মুয়ীদ, মেহবুব চৌধুরী, অর্কন ইনোভেশনের মোহাম্মদ ইউসূফ রায়হান রেজা, ডায়নামিক ওয়ার্ল্ড হোল্ডিংয়ের ইশতিয়াক আহমেদ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মার্কেন্টাইল সার্ভিস লিমিটেডের নভেরা চৌধুরী, সনিস্কাই ইন্টারন্যাশনালের  ফরহাদ গনি মোহাম্মদ, এশিয়ান ক্যাপিটাল ভেঞ্চারর্সের বিলকিস ফাতেমা জেসমিন, দ্য কমিউনিকেশন কোম্পানির রজার বার্গ, জেইন উপর, নোবেল স্ট্যান্ডার্ডের মোহাম্মদ আবুল বাশার, ডালিয়ান লেটেক্সের বেনজির আহমেদ, মোহাম্মদ মোকমেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ মোতাজ্জারুল ইসলাম, বেস্ট নিট ইন্টারন্যাশনালের আফজালুর রহমান, ম্যাক্স স্মার্ট ইন্টারন্যাশনালের সুধির মল্লিক, জেদ উইন্ডের জীবন কুমার সরকার, পাইওনিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসের নিজাম এস সেলিম, এসটিএস ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের এম সেলিমুজ্জামান, সভেরিন ক্যাপিটালের  সৈয়দ সিরাজুল হক, ক্যাপ্টেন এস এ জাউল, স্প্রিং সোর ইনকরপোরেটেডের এফ এম জোবায়দুল হক, সালমা হক, প্যারামাইন্ড রকের মোহাম্মদ আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক, তারিক একরামুল হক, রিংস্টার প্রাইভেট লিমিটেডের মোহাম্মদ শাহেদ মাহমুদ, আজমত মঈন, খাজা শাহাদাত উল্লাহ, দিলীপ কুমার মোদী, দ্য কন্ট্রাক্ট এ- সার্ভিসের সৈয়দ সামিনা মির্জা, মির্জা এম ইয়াহিয়া, গ্রাটানভিল লিমিটেডের মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, পাথ ফাইন্ডারের জুলফিকার হায়দার, তালাভেরা ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইঙ্কের উম্মে রুবানা, মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, এন্ডারলাইট লিমিটেডের নজরুল ইসলাম, লাকি ড্রাগন ম্যানেজমেন্ট ইঙ্কের মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, বাংলা ট্রাক ও ব্যাকিংডেল লিমিটেডের জাফর উমীদ খান, ম্যাগফিসেন্ট ম্যাগনিট্যুড ইঙ্কের আসমা মোমেন, এ এস এম মহিউদ্দিন মোনেম, তাইতান এলায়েন্সের এ এফ এম রহমাতুল বারি, মেঘনাঘাট পাওয়ারের ফয়সাল চৌধুরী, ড্রাগন ক্যাপিটাল ক্লিন ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্টের আহমেদ সমীর।

পদ্মা সেতু নিয়ে খালেদার বক্তব্য পাগলের প্রলাপ

এদিকে ফজিলাতুন সেনা বাপ্পির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। উনার দলের লোকজন যেন ওই সেতুতে না ওঠে তাও নিষেধ করেছেন। একটি সেতু তো জোড়া দিয়েই নির্মাণ হয়। এ ছাড়া হয় না। তিনি জোড়াতালি বলতে কি বোঝালেন সেটা আমার বোধগম্য না। তবে বাংলাদেশে তো একটা প্রচলিত কথা আছে পাগলে কি না কয়, ছাগলে কি না খায়। এ ধরনের পাগলের কথায় মনযোগ না দেওয়াই ভালো।

সম্প্রতি খালেদা জিয়া এক অনুষ্ঠানে বলেন, পদ্মাসেতু জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। সেই সেতুকে কাউকে না ওঠার জন্য বলেন তিনি। এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই পদ্মাসেতু আমরা প্রথমবার সরকার গঠনের সময় চিন্তা করেছিলাম। আমি সেই সময় জাপান সফরের করে তাদেরকে পদ্মাসেতু নির্মাণে সহযোগিতার কথা বলি। আমরা জাপান সরকারের কাছে পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণ করতে সহায়তা চেয়েছিলাম। সেই হিসেবে তারা সমীক্ষাও করেন। আর সমীক্ষার পর যে জায়গাটা তারা নির্বাচন করেন সেখানে আমি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করি। এরপর ২০০১  সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতার আসার পর সেই সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে সেই সেতু আর তখন নির্মাণ হয়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর আমরা পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করি। শুরুতেই একটা হোঁচট খাই। যেখানে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনে। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম এ রকম দুর্নীতি হয় নাই। সেটা আজকে প্রমাণিত। কানাডার আদালত বলে দিয়েছে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। বিশ্বব্যাংক অর্থ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এর কাজ শুরু করে দিয়েছি। এই সেতু নিয়ে বিএনপির নেত্রী বক্তব্য দিয়েছে। এটা নিয়ে আমি কি মন্তব্য করব?’ তিনি বলেন, ‘আমার মন্তব্য একটায় এই ধরনের পাগলের কথায় বেশি মনোযোগ না দেয়ায় ভাল। কারণ কোন সুস্থ্ মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারে না।’

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত। এই কাজগুলো জনগনের স্বার্থে করা। এই সেতু হলে জিডিপি ১ শতাংশ বেড়ে যাবে। অথচ তিনি (খালেদা জিয়া) বলে দিলেন তার দলের কেউ যেন এই সেতুতে না উঠে। আমি জানি না বিএনপির নেতা নেত্রীরা যারা তার এই কথা শুনেছেন তারা সত্যিই পদ্মাসেতু হওয়ার পর উঠবেন কি না। যদি তারা উঠে তখন এলাকার লোকজন নজরদারি করতে পারবে, সত্যিই তারা পদ্মা সেতুতে উঠল কি না সেটা আমরা দেখব। আমার মনে হয় এটাকে পাগলের প্রলাপ হিসেবেই নিয়ে নেয়া ভাল।’

সারাবাংলা/এইচএ/এমআই

আরও পড়ুন:

বিএনপি-জামায়াতের হৃদয়ে ছিল পেয়ারে পাকিস্তান: প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ফটোসাংবাদিক শোয়েব মিথুন আর নেই
২১ অক্টোবর ২০২৪ ২১:০৭

সম্পর্কিত খবর