Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জিয়া পরিবার ছাড়াই বিএনপির ভোট!


৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:২৫

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সবগুলো মনোননয়ন বাতিল হওয়ায় এবং তিন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদের সাজা নিয়ে তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকায় দৃশ্যত ‘ভোট রাজনীতি’র বাইরে চলে গেছে জিয়া পরিবার।

নির্বাচনের বছরে পর পর দুই মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দণ্ড পাওয়ায় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আগে থেকেই গুঞ্জন উঠেছিল— ধীরে ধীরে জিয়া পরিবারের বাইরে চলে যাচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। খালেদা জিয়ার কারাবাস, শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একের পর এক সাজা, নির্বাসন এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্তত সেই বার্তা-ই দিচ্ছিল শুরু থেকে।

তবুও ‘শেষ দেখে নেওয়ার’ জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেয় বিএনপি। কিন্তু দুটি মামলায় ১০ ও ৭ বছর করে দণ্ড থাকায় তিনটি আসনেই খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও মনোনয়ন বৈধ করতে পারেনি বিএনপি।

ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়া পরিবারের একমাত্র প্রতিনিধি খালেদা জিয়ার ভোট করার সুযোগ হাতছাড়া হয়। এমন পরিস্থিতিও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

গত মঙ্গলবার (০৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ঘটনা যাই ঘটুক, আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব। কোনো ষড়যন্ত্র আমাদেরকে নির্বাচন থেকে সরাতে পারবে না। এর আগে এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা নির্বাচনে থাকার জন্যই এসেছি।’

অর্থাৎ জিয়া পরিবারের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। দলটির ৪০ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি নির্বাচনে গেলে সেখানে জিয়া পরিবারের প্রতিনিধিত্ব ছিল অনিবার্য। দলীয়ভাবে ফলাফল যাই হোক খালেদা জিয়ার জয় ছিল অবধারিত।

বিএনপির অতীত ঘেটে দেখা যায়, ১৯৭৮ সালে দলটি গঠনের পর ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০৭টি আসনে জয়লাভ করে।

১৯৮৬ ও ১৯৯৮ সালে এইচ এম এরশাদের আমলে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৬ আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন খালেদা জিয়া।

১৯৯৬ সালের ১৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে একক সংখ্যাগোরীষ্ঠতা পায় বিএনপি। সেই নির্বাচনে জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে খালেদা জিয়া, তার ভাই সাঈদ এস্কান্দার, বোন খুরশিদ জাহান হক, বোনের ছেলে প্রোকৌশলী শাহরিয়ার ইসলাম তুহিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একই বছর অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতে জয়লাভ করেন। বড় বোন খুরশিদ জাহান হক দিনাজপুর-৩  এবং ভাই সাঈদ এস্কান্দার ফেনীর ফুলগাজী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এর পর ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় বিএনপি। সেবারও পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন খালেদা জিয়া। সেই নির্বাচনে কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান দল ও জোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। খালেদা জিয়ার বড় বোন খুরশিদ জাহান হক দিনাজপুর-৩ ও সাঈদ এস্কান্দার ফেনীর ফুলগাজী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের নির্বানে বিএনপির শোচনীয় পরাজয় ঘটলেও খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনটিতেই জয় পান। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি।

কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর যে ক’টা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি তার সবগুলোতেই জিয়া পরিবারের প্রতিনিধিত্ব ছিল। শুধু পরিবার নয়, নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে অনেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। খালেদা জিয়ার ভাই, বোন, বোন জামাই, ভাগ্নে— কেউ না কেউ জাতীয় সংসদে জিয়া পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

এদিকে কিছুদিন আগেও খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও শর্মিলী রহমান নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন বলে শোনা গেলে তারা কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন না। দলীয় মনোননয় ফরম কেনা, জমা দেওয়া, মনোনয়ন চিঠি গ্রহণ ও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়াসহ এরইমধ্যে শেষ হওয়া নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেননি তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।

তবে এবার নীলফামারী-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলামের স্বামী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। দূরের আত্মীয় হওয়ায় রফিকুল ইসলামকে জিয়া পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হচ্ছেন না।

সারাবাংলা/এজেড/একে

একাদশ জাতীয় নির্বাচন জিয়া পরিবার বিএনপি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর