ভারতীয় ঋণ: দিল্লি যাচ্ছে প্রতিনিধি দল
৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:০৭
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ভারতীয় ঋণে পরিচালিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পর্যালোচনা বৈঠক। দু’দিনের এ বৈঠকে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। এর নেতৃত্ব দেবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব এবং এশিয়া উইং এর প্রধান মো. জাহিদুল হক।
সূত্র জানায়, ইআরডির বৈদেশিক সাহায্যের বাজেট ও হিসাব শাখা (ফাবা উইং) সূত্র জানায়, প্রথম লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় প্রতিশ্রুতি ছিল ১০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে ঋণ ৮০ কোটি ডলার এবং অনুদান ২০ কোটি ডালার। এ বিপরীতে ছাড় হয়েছে মাত্র ৪৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। এছাড়া দ্বিতীয় এলওসির আওতায় প্রতিশ্রুতি ছিল ২০০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে ছাড় হয়েছে দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের একটি প্রকল্পের অনুকুলে ছাড় হয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় এলওসির আওতায় প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৪৫০ কোটি ডলার। তবে এর আওতায় প্রকল্পগুলো এখনো বাস্তবায়ন পর্যায়ে যায়নি।
ইআরডির এশিয়া উইং এর যুগ্ম সচিব ও প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ড. একেএম মতিউর রহমান জানান, প্রথম এলওসির প্রকল্পগুলো প্রায় শেষ এবং দ্বিতীয় এলওসিতে একটি প্রকল্পে অর্থছাড় শুরু হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় এলওসির ৪৫০ কোটি ডলারের একটি প্রকল্পও এখনো বাস্তবায়নে যায়নি। তবে প্রকল্পগুলোর বিপরীতে অর্থছাড় যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য দিল্লিতে আলোচনা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইআরডির সচিব মনোয়ার আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোতে গতি বাড়াতে এর আগেই আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। যেমন তিন পক্ষ মিলে নিয়মিত বৈঠক করা, ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট মিটিং এবং পারস্পারিক তথ্য আদান প্রদান করা। আমি নিদিষ্ট সময়েই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করার তাগিদ দিয়েছি। বলেছি এ ক্ষেত্রে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, ইআরডি এবং ভারতীয় কর্মকর্তারা তিন পক্ষ মিলেই বৈঠক করতে হবে। এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে।
ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৭ আগস্ট ভারতের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের প্রথম ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরবর্তীতে ২০ কোটি ডলার অনুদানে রূপান্তর করে ভারত। এর আওতায় ১৫টি প্রকল্প বাস্তয়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। ৩টি কাজ চলমান রয়েছে। এ তিনটিতেই রয়েছে বড় অংকের বরাদ্দ। এছাড়া ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার দ্বিতীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। পরে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। এ ঋণের আওতায় ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু নানা কারণে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরগতি বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় এলওসির ১১ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন লাভ করেছে। চারটি প্রকল্পের বিষয়ে কর্মামিয়াল কন্ট্রাক্ট স্বাক্ষর হয়েছে। অন্যদিকে গত বছরের অক্টোবর মাসে ঢাকায় ভারতীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে ৪৫০ কোটি ডলারের তৃতীয় এলওসি’র ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন লাভ করেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্প প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতি,পরামর্শক নিয়োগ ও নির্মাণকাজের দরপত্র দলিলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে সময় লাগে। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া বাস্তবায়ন পর্যায়ে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে গতি কম থাকে।
অন্যদিকে, প্রকল্প পরিচালকের হাতে আর্থিক ক্ষমতা থাকে না। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক তাদের ইচ্ছামতো অর্থছাড় করে। মূলত এসব কারণে প্রকল্পগুলোর ধীর গতি বিরাজ করছে। তৃতীয় এলওসির আওতায় নেয়া প্রকল্পগুলোর অন্যতম হচ্ছে,রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অন্য স্থানে নেয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন, বুড়িগঙ্গা রিভার রেস্টরেশন প্রজেক্ট, চট্টগ্রাম বন্দরে মাল্টিপারপাস কন্টেইনসার টার্মিনাল স্থাপন,পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নত করা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ, ঈশ্বরদীতে রেল ও সড়ক পথের জন্য আইসিডি নির্মাণ, মংলা ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তরল বর্জ্য শোধনাগারের যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।
সারাবাংলা/জেজে/এমএইচ