তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব: লাগাতার অবস্থানের ঘোষণা বেফাকের
১০ জানুয়ারি ২০১৮ ২২:২৪
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা সা’দ কান্ধলভির অংশগ্রহণ ঠেকাতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর ঢাকার নেতারা।
বুধবার সন্ধ্যায় বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মাওলানা সা’দ ভারত ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবে। কাকরাইল থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তা অচল করে দেওয়া হবে। তাকে বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না।’
বুধবার মাওলানা সা’দ বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আসার পর বিক্ষোভ করতে থাকে তার বিরোধীরা। তাকে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করেও রাখা হয়।
এরপর পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে আসে। তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তায় এখন তিনি সেখানেই রয়েছেন।
রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ সারারাত কাকরাইল মসজিদে নিরাপত্তা দেবে। শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকবে। প্রায় ২০০ জনের মতো পুলিশ পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন।’
আগামীকাল থেকে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। সেখানে কি পুলিশ পাহারায় মাওলানা সা’দ হুজুরকে পৌঁছে দেওয়া হবে? জানতে চাইলে এডিসি বলেন, ‘সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সে রকম সিদ্ধান্ত হলে তাই করা হবে। উত্তরা এবং যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে কিছু হুজুর কাকরাইল এলাকায় এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তবে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া আরও যারা কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেছে তাদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’
তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইলিয়াস (রহ.)-এর নাতি মাওলানা সাদ। তার মৃত্যুর পর বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ (রহ.), মাওলানা ইনামুল হাসান (রহ.) ও মাওলানা জুবায়েরুল হাসান (রহ.)। এদের মধ্যে মাওলানা জুবায়েরুল হাসান একক নেতৃত্ব প্রথা বিলুপ্ত করে শুরাভিত্তিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের ইন্তেকালের পর মাওলানা সা’দ আমিরের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়ে শুরাভিত্তিক প্রচলিত পদ্ধতি এড়িয়ে ফের একক নেতৃত্বে কাজ শুরু করেন তিনি।
তাবলিগ জামাত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ তাবলিগ জামাত পরিচালনা কমিটির শুরা সদস্য ১১ জন। এর মধ্যে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও হাফেজ মাওলানা জুবায়েরের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং ছিল। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে এর আগেও দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন। তবে দ্বন্দ্ব পরিস্থিতি ঘোলাটে হয় মাওলানা সা’দ কিছু ফতোয়া দেওয়া পর থেকেই। এরপর মাওলানা জুবায়েরের পক্ষে অবস্থান নেয় কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তাবলিগ জামাতের জুবায়ের গ্রুপের অভিযোগ মাওলানা সা’দ ফতোয়া দিয়েছেন, স্মার্টফোন সঙ্গে থাকলে নামাজ হবে না। কারণ স্মার্টফোনে নানা ধরনের মানুষের ছবি থাকে। আর ছবি সঙ্গে থাকলে নামাজ হয় না।
সূত্র জানায়, মাওলানা সা’দ মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আরবি শিক্ষার বিনিময়ে টাকা নেওয়া হারাম। মূলত এমন ফতোয়ার পরেই পরিস্থিতি উত্তাল হয়।
এ ছাড়াও গত নভেম্বরে পাকিস্তানে তাবলিগ জামাতের এক আয়োজনে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের মজলিশে শুরা সদস্য ও ফায়সাল (আমির) সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও হাফেজ মাওলানা জুবায়েরের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জুবায়ের সেখানে যান। দেশে ফেরার পর তাকে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে বলা হয়। কিন্তু জুবায়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি না করে তথ্য গোপন করেন। এ নিয়েও ঝামেলা হয় দুই পক্ষের মধ্যে।
তাবলিগ জামাতের বিরোধ নিয়ে এই দুই পক্ষের মধ্যে মামলা পাল্টা মামলা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর কাকরাইল মসজিদে ওয়াসিফুল ও জুবায়ের গ্রুপ একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে ধাক্কাধাক্কি, এরপর হাতাহাতি হয়।
সারাবংলা/ইউজে/এনএস/এমআই