দ্বিতীয় দিনেও গুলশানে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিক্ষোভ
৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:৫০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা দ্বিতীয় দিনের মতো গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিক্ষোভ করছে। রোববার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই এ বিক্ষোভ শুরু হয়।
এদিন বেলা ১২টায় গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় উত্তর ও পশ্চিম গেটে কয়েক শ’ লোক জটলা বেধে স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের হাতে পছন্দের প্রার্থীর ছবি সম্বলিত পোস্টার, মাথায় নামাঙ্কিত ব্যাজ, কারো কারো কপালে বাঁধা কাফনের কাপড়।
বিক্ষুব্ধ এসব লোক নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি মনোনীতি প্রার্থী ও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের বিরুদ্ধে তুলছেন মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, ‘মাঠের বাস্তব চিত্র অনুধাবন না করে ঢাকায় বসে অর্থের বিনিময়ে এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
কারও কারও অভিযোগ, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকা ত্যাগী নেতাদের চেয়ে ‘বিদেশ’ কানেকশন যাদের ভাল, তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে করে ভোটের মাঠে দাপট দেখিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বেলা সাড়ে ১২টায় গুলশান কার্যালয়ের পশ্চিম গেটে বিক্ষোভ করছিলেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত শেখ মো. আব্দুল্লাহ’র কর্মী সমর্থকরা। তাদের বক্তব্য হলো, ‘এই আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন অত্যন্ত প্রবীণ, সম্মানী, হেভিওয়েট প্রার্থী হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ মো. আব্দুল্লাহকেই প্রয়োজন ছিল মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাদীখান) আসনে।’
তারা বলছেন, ‘দাপট দেখিয়ে টিকে থাকার জন্য এবং নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে সমান্তরালভাবে লড়াই করতে হলে এই আসনটিতে শেখ মো. আব্দুল্লাহ যোগ্য প্রার্থী। তবে কর্মী সমর্থকদের এই দাবির পক্ষে শ্রীনগর-সিরাজদীখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকে কথা বলার জন্য পাওয়া যায়নি। বরং বিক্ষোভকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীনগর-সিরাদীখান উপজেলায় দু’টি করে কমিটি আছে। এর একটি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, অন্যটি শেখ মো. আব্দুল্লাহকে সাপোর্ট করে। যারা বিক্ষোভ করছেন, তারা সবাই শেখ মো. আব্দুল্লাহ সাপোর্টার।
সিরাজদীখান উপজেলা বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন অত্যন্ত সম্মানী লোক। তিনি প্রবীণ রাজনীতিক। তার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে এই আসনে নির্বাচনের জন্য শেখ মো. আব্দুল্লাহ আমাদের প্রথম পছন্দ। আমরা চাই তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক।’
শেষ পর্যন্ত শেখ মো. আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন কি না?— এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু বিএনপি করি, সেহেতু কেন্দ্রে যেতে পারলে অবশ্যই ধানের শীষে ভোট দেব। তবে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনই যদি প্রার্থী থেকে যান, তাহলে কর্মী-সমর্থকদের মাঠে নামানো কঠিন হয়ে যাবে।’
দুপুর ১টায় গুলশান কার্যালয়ের উত্তর গেটে বিক্ষোভ করছিলেন কুমিল্লা-৪ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা (কুমিল্লা উত্তর) বিএনপির সভাপতি মনজুরুল আহসান মুন্সির সমর্থকরা। গত দুই দিন ধরে তারা এখানে বিক্ষোভ করছেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তৈরি করা পছন্দের প্রার্থীর ছবি সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার, হেডার ও কাফনের কাপড় নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক ৪ বারের সংসদ সদস্য মনজুরুল আহসান মুন্সির এই আসনটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতনকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচন করে আব্দুল মালেক রতন ৯০০ ভোট পেয়েছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, আজকের দিনের মধ্যে আব্দুল মালেক রতনকে সরিয়ে এ আসনে মনজুরুল আহসান মুন্সিকে ধানের শীষের মনোনয়ন দিতে হবে। অন্যথায় এই আসনটি হারাবে বিএনপি। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে বঞ্চিত করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত মানবে না দেবীদ্বার উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
দেবীদ্বার উপজলো ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে, ‘যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তার গ্রহণযোগ্যতা, ভোট এবং জনপ্রিয়তা কিছুই নেই। আজ দিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে নির্ঘাত এই আসনটি হারাবে বিএনপি।’
চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা দেওয়ার পর শনিবার সকাল থেকেই গুলশান কার্যালয়ে বিক্ষোভ করছে মনোনয়ন বঞ্চিতদের কর্মী-সমর্থকরা। গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম উদ্দীন সেলিম, চাঁদপুর-১ আসনে এহসানুল হক মিলন, মানিকগঞ্জ-১ আসনে খন্দকার ডাব্লু, লক্ষ্ণীপুর-১ আসনে শেখ মো. আব্দুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৈমুর আলম খন্দকার, কুমিল্লাহ-৪ আসনের মনজুরুল আহসান মুন্সি সমর্থকরা বিক্ষোভ করছেন।
সারাবাংলা/এজেড/এমও