‘নৌকা নয়, ধানের শীষ ঠেকাতে ১৪০ আসনে জাপার আলাদা প্রার্থী’
১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:১৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: মহাজোটের শরিক দল হিসেবে সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৯টি আসন নিশ্চিত হওয়ার পরও অন্তত আরও ১৪০টি আসনে উন্মুক্ত প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। গুঞ্জন উঠেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষিতে বনিবনা না হওয়াতেই জোটের বাইরে প্রার্থী দিচ্ছে দলটি। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নৌকা নয়, ধানের শীষকে ঠেকাতেই এসব প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়বেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শুরু থেকেই দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলটিতে মনোনয়নের হিসাব নিয়ে চলছে গরমিল। এক পর্যায়ে দলের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়, মহাজোট থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর জোটের পক্ষ থেকে দেওয়া হিসাব মেলেনি।
নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ সভাপতির সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, জোটের পক্ষ থেকে নৌকা প্রতীকে ২৭২ জন এবং মহাজোটের আরও দুই প্রার্থী লড়বেন বাইসাইকেল প্রতীকে। সেই হিসাবে জাতীয় পার্টির জন্য বরাদ্দ থাকে জোটের ২৬ আসন। যদিও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা জোট থেকে ২৯ আসনে লড়াই করছে। তবে এর বাইরেও ১৩২টি আসনে থাকছে লাঙ্গলের উন্মুক্ত প্রার্থী। যদিও সোমবারই এই হিসাবে আরও একটু পরিবর্তন আসে। এবার জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, জোটের বাইরে তাদের আলাদা প্রার্থীর সংখ্যা ১৪০।
রাজনৈতিক মাঠে এরইমধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর কষাকষিতে বনাবনি না হওয়ায় আলাদা করে প্রার্থী দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে জাতীয় পার্টির। মহাজোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলীয় প্রধান হু্সেইন মুহম্মদ এরশাদ এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু জাতীয় পার্টির সূত্র বলছে, নৌকার ওপর কোনো বিরাগ থেকে নয়, বরং রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করে ওই আসনগুলোতে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। নৌকার কোনো ক্ষতি নয়, বরং ধানের শীষকে ঠেকানোর কৌশল হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: জোটে ২৯ আসন, ভোটে আরও ১৩২ আসন
জাপা সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, ওই আসনগুলোয় জাতীয় পার্টির ভোট আছে। সেগুলোতে জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিলে অনেক প্রার্থী অভিমানের বশে নৌকার বদলে ধানের শীষের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। এছাড়া তৃণমূলে কষ্ট করা নেতাদের মনোনয়ন না দেওয়া হলে জাতীয় পার্টি এই মুহূর্তে ভাঙনের মুখে পড়তে পারেন।
ওই সূত্রটি বলছে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলে লাঙ্গলের ভোট লাঙ্গলেই পড়বে। কোনো ভোট ধানের শীষে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই ভোটে আওয়ামী লীগ সহজেই জয়ের দেখা মিলবে।
জাপার হিসাব-নিকাশ বলছে, জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে যে ২৯টি আসন পেয়েছে, এখান থেকে অন্তত ১৯/২০টি আসন জাতীয় পার্টির ঘরে আসবে। আর বাকি যে ১৪০টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনটি আসন আসতে পারে জাতীয় পার্টির ঘরে।
এছাড়া বিএনপি যদি কোনো কারণে নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যায়, তাহলে জাতীয় পার্টি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ কাজে লাগাবে। মূলত একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের জন্যই জাতীয় পার্টি ওই আসনগুলোয় আলাদা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আলাদাভাবে জাতীয় পার্টি যে সব প্রার্থী দিয়েছে, তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয় এর মধ্যে দূরদর্শী কৌশল আছে।’
এর বাইরে আর কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, তা জানা নেই বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির এই ভাইস চেয়ারম্যান।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে/টিআর