আট বিভাগে হচ্ছে মানি লন্ডারিং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল
১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:৪০
গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দেশের আট বিভাগে গঠিত হচ্ছে মানি লন্ডারিং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল। বিদেশে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের কাজ করছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বুধবার সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিদেশে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অর্থায়ন সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ৮টি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে। আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।
ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি জানান, ট্রাইব্যুনালের প্রধান হবেন, জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক। প্রতিটি ট্রাইব্যুনালের জনবল থাকবে ৯ জন করে। মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, এসব ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২০ তম সভা গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে ওই সভায় দেশের ৮ বিভাগে মানি লন্ডারিং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে তা বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
গত ৩১ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী মুশফিক মাহবুব রবিন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে, মানি লন্ডারিং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং তা পরিচালনার জন্য মোট ৭২টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ট্রাইব্যুনালের মোট জনবল থাকবে ৯ জন করে। এসব জনবলের মধ্যে রয়েছেন, একজন জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক, এক জন স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর, বেঞ্চ সহকারী, অফিস সহকারী, গাড়িচালক, জারি কারক, অফিস সহায়ক ও ঝাড়ুদার।
আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার আলোকে গত ২৬ শে ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে মানি লন্ডারিং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনার বিষয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রশ্নের জবাব দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় জনপ্রশাসনে পাঠানো হবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের এক সূত্র থেকে জানা যায়, সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হচ্ছে না। অপরাধীরা নিত্য নতুন কৌশলে দেশ থেকে টাকা পাচার করছে। পাশাপাশি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্নভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে অর্থ। এসব ঘটনার মধ্যে কিছু ঘটনায় মামলা হয়েছে, যা আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু দীর্ঘ সূত্রতার কারণে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না।
২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অর্থ পাচারের প্রায় চারশো’ ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এসব মামলায় ১৪০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এবং তদন্ত শেষে ৮৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪৩টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে ২৬টি অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্ত শেষে মামলা করা হয়েছে ১১টি। ২০১৪ সালে ৮৯টি ঘটনায় ২০টি, ২০১৩ সালে ৮১টি ঘটনার ৬৬টি, ২০১২ সালে ৮০ ঘটনায় তদন্ত শেষে মামলা করা হয়েছে ৩২টি। অন্যদিকে ২০১১ সালে ৬৭টি ঘটনায় ৩৫টি, ২০১০ সালে ৫৬টি ঘটনায় শেষে ১৯টি এবং ২০০৯ সালে মামলা হয়েছে মাত্র ২টি।
সারাবাংলা/জিএস/এমএ