Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন আইনে ভ্যাটের সর্বনিম্ন হার ৫ শতাংশ: অর্থমন্ত্রী


১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:৪২

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাটের সর্বনিম্ন হার ৫ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তার মত, তিন স্তরের বাকি দুই স্তরের ভ্যাটের হার হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ। আর আইনটি ২০২০-২১ বা ২০২১-২২ অর্থবছরে কার্যকর হতে পারে। একইসঙ্গে ট্যারিফ মূল্যের বিলুপ্তিও চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দিবসটির এবারের স্লোগান ‘ভ্যাট দিচ্ছে জনগণ, দেশের হচ্ছে উন্নয়ন’। জাতীয় পর্যায়ে ৯টি প্রতিষ্ঠান ও বৃহত্তর ঢাকার ২১টি প্রতিষ্ঠানকে অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়। তিন ক্যাটাগরিতে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১-২২ সালে দেশে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। এখন ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ আছে, ১০ শতাংশ আছে, ৭.৫ শতাংশ আছে, ৫ শতাংশও আছে। একটা বোধ হয় ৪ শতাংশ আছে। এখানেও আমরা ১৫ শতাংশ রেটে থাকব না। ১৫ শতাংশের পরিবর্তে তিনটি রেট করতে পারি— ১৫ রাখেন, ৭.৫ রাখেন, ৫ রাখেন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ শীর্ষক নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে চেয়েছিল সরকার। তখন ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশের কথা বলা হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের পক্ষে প্রথমত এই হার কমানোর দাবি ছিল। অনেক ব্যবসায়ী ১২ শতাংশ পর্যন্ত হার মেনে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৫ শতাংশ ভ্যাট হারে অটল থাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীও আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন। সে হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে এই আইন কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল রোববার (৯ ডিসেম্বর) ভ্যাট দিবসের সংবাদ সম্মেলনেও এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে আইনটি কার্যকর হবে। তবে আজ অর্থমন্ত্রী জানাচ্ছেন, আইনটি কার্যকর হতে আরও সময় লাগবে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ট্যারিফ রেট কোথাও রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। যে পণ্যের দাম যেটা আছে, সেটাই থাকবে। সেই দাম সবসময় বিবেচিত হবে। যেখানে দেখবেন দাম খুব বেশি, সেখানে জিরো ট্যাক্স দিলেই হলো। বা যাই করেন, আমাদের উচিত হবে এই ট্যারিফ রেটকে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণরূপে বিদায় করে দেওয়া। আস্তে আস্তে বলছি এই কারণে, ট্যারিফ রেট এত বিস্তৃত যে এটা হঠাৎ করে উঠিয়ে দিলে দেশের মঙ্গল হবে না। দেশের মঙ্গল হোক, দেশের স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটিকে বিদায় করে দেওয়া উচিত।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এনবিআরে অনেক সংস্কার হয়েছে। তবে ভাবতে হবে, আরও কিছু করার আছে কি না। সত্যি বলতে কী, কর অনুপাত দেখে আমরা লজ্জিত হই। নেপালের চেয়েও কম কেন আমাদের কর হার? আমাদের জিজ্ঞাসা করার সময় এসেছে।

তিনি বলেন, মানুষ কর দিতে চায়। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি ও সিস্টেমের জন্য ভয় পায়। আমি মনে করি ভয়টা দূর করা প্রয়োজন। ইউনিয়ন পর্যায়ে খানা কর নিয়ে ভাবা যেতে পারে, এনবিআর বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, দুদক কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগী নয়, সহযোগী। আমরা সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই। ভ্যাট সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দোকানে চালান ফরম চাইলে তারা বলে প্যাকেজ ভ্যাট দিই। প্যাকেজ ভ্যাট একটা সমস্যা। এ থেকে উত্তরণের পথ ভাবতে হবে। এসডিজির একটি শর্ত কর অনুপাত। সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে  কর অনুপাত বাড়ানো সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দুদক ও এনবিআর এক হয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। উন্নত দেশে কর অনুপাত ২০ থেকে ৩০ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমরাও উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছি। ক্রমান্বয়ে সেই পর্যায়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সামর্থ্য বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা আয়-রোজগার করেন। সবাই কর ও ভ্যাট দেবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বিজ্ঞাপন

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, হয়রানিমুক্তভাবে আমরা আয়কর ও ভ্যাট দিতে চাই। আস্থার মাধ্যমে কর দিতে চাই। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চাই।

নতুন ভ্যাট বাস্তবায়নের আগের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত ভালো হয় না। এর উদাহরণ ভ্যাট আইন। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী তখন দুই বছরের জন্য আইনটি স্থগিত করেছিলেন। তাই আমরা সব ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই। ইএফডির ব্যবহারকে স্বাগত জানিয়ে এনবিআরকে আরও বেশি প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ভ্যাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর